দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। গতকাল প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। ফলে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন। এ নির্বাচনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৮৮৬ জন প্রার্থী। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৫২৯ জন এবং স্বতন্ত্র ৩৫৭ জন। অর্থাৎ প্রতি আসনে প্রার্থী থাকছেন গড়ে ছয়জনের বেশি। তবে প্রার্থী সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে। আজ ইসির আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর সংখ্যা জানানোর কথা রয়েছে। এবারে নির্বাচনি মাঠে রয়েছে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।
ইসির সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে ৩০০ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ছিল ২৬৩ আসনে। গতকাল আদালতে একজন নৌকার প্রার্থী প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এখন নৌকা নিয়ে লড়বেন ২৬৪ জন। তবে শরিকসহ এ নির্বাচনে মোট নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকছেন ২৭০ জন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ২৮৩ আসনে লড়াই করবেন লাঙ্গল প্রতীকে। তবে এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। এ ছাড়া ১৪-দলীয় জোট শরিকদের ৬টি আসন ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। এ ৬টি আসনেই তারা নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করবেন।
প্রচারে প্রার্থীদের যা মানতে হবে : সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচারের সময় পাচ্ছেন ১৯ দিন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও একই সময় দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। পোস্টার রঙিন করা যাবে না। পোস্টারে প্রার্থী ছাড়া দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করা যাবে, তবে তা দড়িতে ঝুলিয়ে প্রচার করতে হবে। ৪০০ বর্গফুট এলাকার বেশি বড় কোনো প্যান্ডেল করে প্রচার চালানো যাবে না। কাপড়ের তৈরি ব্যানার করে প্রচার চালানো গেলেও ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহার করা যাবে না। জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। সভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে অবহিত করে অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে সভার দিন, সময় ও স্থান সম্পর্কে উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে।মাইকে প্রচার হতে হবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে। নির্বাচনি এলাকায় প্রতি ইউনিয়ন আর পৌর ও সিটি এলাকার ওয়ার্ড প্রতি নির্বাচনি ক্যাম্প করতে হবে একটি। ক্যাম্পে ভোটারদের কোনো কোমলপানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনোরূপ উপঢৌকন দিতে পারবেন না। প্রার্থী তার নির্বাচনি এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা বা অনুদান প্রকাশ্যে বা গোপনে দিতে পারবেন না। এমনকি অঙ্গীকার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। প্রচারের জন্য কোনো গেট, তোরণ নির্মাণ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকতে হবে। নির্বাচনি ক্যাম্প এমন স্থানে তৈরি করতে হবে যেন জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা না হয়। মোটরসাইকেলসহ যে কোনো মোটরগাড়িতে করে মিছিল, মশাল মিছিল বা শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কোনো প্রকার আলোকসজ্জা করা যাবে না। নির্বাচনি প্রচারণায় প্রতীক হিসেবে জীবন্ত কোনো প্রাণীর ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। পোস্টারের সাইজ দৈর্ঘ্যে ৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার কোনোভাবেই ৩ মিটারের বেশি হবে না। প্রচারের অংশ হিসেবে যে কোনো প্রকার দেয়াল লিখন, পোস্টার সাঁটানো দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রচারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অন্য কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সম্মানহানিকর কিছু করতে পারবে না। কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, বিস্ফোরক বহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
সিলেট : প্রতীক পেয়েই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মিছিল বের করেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। দলীয় প্রতীক নৌকা বরাদ্দ দেওয়া হয় সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে। প্রতীক পেয়ে দলের নেতা-কর্মীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মিছিল বের করেন। সিলেট-২ আসনের নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী গতকাল বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ও সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরী। এ ছাড়াও অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও প্রতীক পাওয়ার পর প্রচারণা শুরু করেন। সিলেট জেলার ৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে গতকাল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ফেনী : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল অনুযায়ী ফেনীর তিনটি আসনের প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। গতকাল প্রতীক পেয়ে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন অনেক প্রার্থী। সমর্থকদের স্লোগানে মুখর ফেনী শহরসহ পাড়া-মহল্লা। ফেনী-১ আসনে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও ফেনী-২ আসনে নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ তিনটি আসনে ২১ জন প্রার্থীর হাতে সোমবার প্রতীক তুলে দিয়েছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রার্থীদের মাঝে তিনি প্রতীক বরাদ্দ দেন। ফেনীর তিন আসনে ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ফেনী-১ আসনে ৬ জন, ফেনী-২ আসনে ৮ জন এবং ফেনী-৩ আসনে ৭ জন প্রার্থী রয়েছেন।
সাভার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোমবার ঢাকা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নবম জাতীয় সংসদের এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ঈগল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
রংপুর : রংপুরে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমেছেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং অন্যান্য প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়েছে। রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৯ জন। রংপুর-১ গঙ্গাচড়ায় ৯ জন, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে ৩ জন, রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনে ৬ জন, রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে ৩ প্রার্থী, রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে ৮ জন, রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গাজীপুর : গাজীপুরের ৫টি আসনে ৩৭ প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন গাজীপুর-১ আসনে আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ রুমানা আলী, গাজীপুর-৪ সিমিন হোসেন রিমি ও গাজীপুর-৫ আসনে মেহের আফরোজ চুমকি। প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রার্থীরা গতকাল দুপুর থেকে প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন।
দিনাজপুর : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ সদর আসনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পরই নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন দিনাজপুর সদর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।
পঞ্চগড় : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রতীক নির্ধারণের পর তারা প্রচার কার্যক্রম শুরু করেন। পঞ্চগড়-১ আসনে বিশাল মিছিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভুইঞা মুক্তা নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বিশাল মিছিল শুরু হয়।