মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৃতপ্রায় তিস্তা এখন ফসলের জমি

দখলে ছোট হচ্ছে প্রতিদিন

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

মৃতপ্রায় তিস্তা এখন ফসলের জমি

শুকনো মৌসুম আসতে এখনো অনেক দেরি, কিন্তু তার আগেই খরস্রোতা তিস্তা নদী পানিশূন্য হয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। নব্য হারিয়ে তিস্তা এখন মৃতপ্রায়, যা এখন ফসলের জমি। নদীজুড়ে সবুজের হাতছানি। জানা গেছে, তিস্তার জেগে ওঠা চরে এবারও ফসল ফলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কিষান-কিষানিরা। নদীর বুক চিরে চলছে চাষাবাদ। আবার আরেক দিকে নদীর দুই কুলে চলছে দখলের মহোৎসবও। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ তিস্তা নদী দখলের বিষয়ে বলেন, ‘জেলার বেশ কিছু স্থানে তিস্তার উপকূলে মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । যারা এখনো দখল করে আছেন তাদের সরে যেতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ সরেজমিনে দেখা গেছে, এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। এক মাস আগেও নদীতে ছিল প্রচুর পানি। বর্ষা শেষ না হতেই নদী যেন মরে গেছে। নদীতে বড় বড় বালুর স্তূপ পরে মূল নদী গতিপথ হারাতে বসেছে। দেখা গেছে, একটি নালা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। বিশাল তিস্তার বুকে নেই হাঁটু পানিও। এই তিস্তার বুকে কৃষক ফলিয়েছেন নানা ফসল। কৃষকরা চাষ করছেন আলু, ভুট্টা, রসুন, গম, মিষ্টি কুমড়া, গাঁজর, পিঁয়াজসহ ১০ ধরনের ফসল। বানের পানিতে সম্বল হারানো মানুষগুলো এখন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাবনার ফসল উৎপাদনে। হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী গ্রামের কৃষক আইনুল হক বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর- ডিসেম্বরে তিস্তার পানির শুকিয়ে যায়। এতে তিস্তায় বড় বড় চর জেগে ওঠে। চরগুলোতে সাধারণ কৃষকরা বিভিন্ন ফসল ফলায়। তিস্তা পারের মানুষের একমাত্র সম্বল চরের জমিতে চাষবাদ করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, তিস্তার পানি এখন কমতে শুরু করছে। পানি কম থাকায় ব্যারাজের সব গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে উজানে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, এবার তিস্তায় জেগে ওঠা চরে ব্যাপক ফসল চাষাবাদ হয়েছে। ভালো ফসল পেলে তিস্তা চরের মানুষের জীবনমান পরিবর্তন হবে। তিস্তা পারের কৃষকদের পরামর্শ দিতে উপজেলা কৃষি উপসহকারী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা খনন না হলে বাংলাদেশ অংশের ১৬৫ কিলোমিটার জুড়ে নদীর দুই পাড়ে বাস করা কোটি মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। এ সময় যে পরিমাণ পানি থাকার কথা তা না থাকায় নদীটি একেবারে মরতে বসেছে। এই নদী রক্ষা হলেই বাঁচবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর