গ্রামীণ জীবনে মাছ ধরার পছন্দের উপকরণ ‘ঝাঁকি জাল’। এটি তৈরি একটি নিপুণ শৈল্পিক কারুকাজ। এ জাল সাধারণত বুনতে হয় হাতেই। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঝাঁকি জাল বুনে জীবিকা নির্বাহ করছেন গৃহবধূ শেফালি রানী (৪০)। এ কাজের একজন দক্ষ কারিগর তিনি। তার হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় নিখুঁত-টেকসই ঝাঁকি জাল। তার বোনা জালের জুড়ি মেলা ভার। গৃস্থালির কাজের ফাঁকে একটু একটু করে জাল বোনেন তিনি। এতে সংসারে যোগ হয় বাড়তি আয়। শেফালি রানীর গ্রাম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের চকরিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় বসে আপন মনে ঝাঁকি জাল (স্থানীয় নাম উড়াল জাল) বুনছেন। বারান্দার খুঁটিতে আটকানো জালের ওপরের অংশ। বিশেষ কায়দায় তৈরি বাঁশের সুঁইতে সুতা পেঁচিয়ে, আরেক টুকরো বাঁশ কাঠির সাহায্যে এগিয়ে চলছে জাল বোনার কাজ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রায় ২০ বছর আগে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ঝাঁকি জাল বোনা আয়ত্ত করেন। দিনমজুর স্বামীর সংসারে বাড়তি আয় জোগাতে সেই থেকে গৃহস্থালির অবসর সময়টুকু তিনি জাল বোনেন। ১৫ থেকে এক মাসে বোনেন একেকটি জাল। জাল বুনতে এক থেকে আধা কেজি সুতা আর লোহার কাঠি প্রয়োজন হয় ৩ থেকে ৪ কেজি। বোনা শেষ হলে ক্রেতার চাহিদামতো ওপরে রশি ও নিচে বসাতে হয় সারি সারি লোহার কাঠি।

বর্তমানে মেশিনের সাহায্যেও জাল বোনা হয়। তবে হাতে বোনা জাল নিখুঁত-টেকসই হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। টেকেও অনেকদিন। একটি জাল বুনতে সাধারণত খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। ধরন অনুযায়ী বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এ থেকে ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচসহ অন্যান্য ব্যয় সংকুলান হয়। তিনি আরও জানান, বর্তমানে এ কাজের কারিগরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।