শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নয়জন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নয়জনকে আটক করেছে র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র?্যাব)। গতকাল রাতে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র?্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ।

তিনি বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। ভাড়াটে হিসেবে রেলপথে নাশকতার জন্য তাদের ব্যবহার করা হয়। এর আগে ঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন এলাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধমূলক ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে           জড়িত সন্দেহভাজন অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান র?্যাব সদস্যরা। পরে আটকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গত মঙ্গলবার তেজগাঁও স্টেশনে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে হরতাল সমর্থকদের দেওয়া আগুনে চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। ট্রেনটি নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসে।

নাশকতায় জড়িতরা শনাক্ত : এর আগে গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নাশকতার পর ডিবি ছায়াতদন্ত শুরু করে। এ তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি নাশকতাকারীদের তথ্য জানতে পারে। সিসিক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে, ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আমরা অনেকের নাম পেয়েছি, আশা করছি তারা দ্রুতই গ্রেফতার হবে। এ ব্যাপারে কাজ চলছে। হারুন অর রশীদ বলেন, ট্রেনে আগুন লাগানো রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি হতে পারে না। যারা এ কাজ করেছে তারা ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই জাতীয় নির্বাচনকে ভ-ুল এবং সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করতে এই নারকীয় কাজটি করেছে। নাশকতার বেশ কয়েকটি ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। তারাই এখন নতুন করে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে হত্যা করছে। ভাড়াটিয়া হিসেবে হোক আর টাকার লোভে হোক, যারা এ কাজ করছে তাদের কারও ছাড় নেই। কোনো বড় ভাইয়ের নির্দেশে এ কাজটি করা হয়েছে, যা মোটেও ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। নাশকতাকারীদের নাম-নম্বর পরিচয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় ঢোকার পথে অগ্নিসংযোগ করা হয় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে। তেজগাঁও স্টেশনে এসে থামা ট্রেনটির তিনটি বগি ভস্মীভূত হয়। একটি বগি থেকে উদ্ধার করা হয় মা ও শিশুসহ চারজনের লাশ।

এদিকে গতকাল বিকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায় চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী। বাকি দুজন ভাসমান ব্যক্তি। তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। আমরা মোহনগঞ্জ ও তেজগাঁও এলাকায় ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায় বেশ কিছু ক্লু ও নাম পেয়েছি। দুই ক্যাটাগরিতে শনাক্ত করেছি। তদন্তের স্বার্থে নামগুলো প্রকাশ করছি না। আমরা সিসি ফুটেজ থেকেও তথ্য নিয়েছি। ট্রেনে আগুন লাগানোর কাজে রেলওয়ে এলাকায় থাকা ভাসমান মানুষকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা সবদিক বিবেচনায় নজর রাখছি। তিনি বলেন, আমাদের টিম রেলের বগি স্ক্যান করবে। সুইপিং, ডগ স্কোয়াড ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। রেল পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্র জানায়, দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বিভিন্ন স্টেশন এলাকার সিসিক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এক যুবকের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়েছে। তাকে খোঁজা হচ্ছে। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের পরিচালক খালেদ মোশারেফ মঙ্গলবার রাতে ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। রেলওয়ে পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছে। রেলের গার্ড, স্টুয়ার্ড, চালক ও গেটকিপারদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনছে।

সর্বশেষ খবর