শিরোনাম
রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঠেকানো যাচ্ছে না আচরণবিধি লঙ্ঘন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঠেকানো যাচ্ছে না আচরণবিধি লঙ্ঘন

গতকালও বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের প্রার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আচরণবিধি মানছেন না বলে অভিযোগ করেছেন খোদ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান। এ ছাড়া পাবনায় নৌকার প্রতিকৃতি তৈরি করে আলোকসজ্জা ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণার কারণে পাবনা-৫ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লায় একাত্তর টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক ও ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলার ঘটনায় কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপিকে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি বাসভবনে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা চালানোর  কারণে কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যানকে শোকজ করা হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের এতদিন শোকজ করা হয়েছে। এখন দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদিকে নির্বাচনি বিধি লঙ্ঘন কিংবা সহিংস ঘটনা ঘটালে যেই হোক না কেন কোনো ছাড় নয়। প্রার্থিতা বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, কোনো শঙ্কা, ভয়ভীতি বা আনুকূল্য নেই। প্রার্থিতা বাতিল হবে, কোনো না কোনো জায়গায় কারও না কারও, এটুকু আভাস আমি দিয়ে রাখলাম। গতকাল নির্বাচন ভবনে এক বৈঠক শেষে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা ঢাকার বাইরে ছিলেন। এ জন্য আমাদের অনেক ফাইল পেন্ডিং ছিল। আলোচনার পর পেন্ডিং ফাইল নিষ্পত্তি করেছি। আচরণবিধি মানাতে পারছেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, যে কোনো ধরনের অভিযোগ, ভিডিও ক্লিপস যেখান থেকেই আসুক না কেন, সব বিষয় আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট এসপির কাছে পাঠাব। তাদের কাছ থেকে আসা তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যশোর, ঝিনাইদহ ও রাজশাহীর তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে কী ব্যবস্থা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিবেদনে যা পেয়েছি তা হলো সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্লিপ্ততার জন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপা আর হরিণাকুন্ডুর ওসির নির্লিপ্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে মামলা হয়েছে। তাই কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যশোরেও মামলা হয়েছে। যেখানে মামলা হয়েছে সেখানে সিদ্ধান্ত হয়নি। এত রদবদল তবু কেন পুলিশ, প্রশাসনে নির্লিপ্ততা- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির এ কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনে তো গণহারে নির্লিপ্ততা নেই। আপনারা কেবল শোকজ করছেন, ব্যবস্থা কেন নিচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এখন শোকজ করাই কেবল নয়, তাদের (ডিসি, এসপি) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব। কোনো একটি দৃশ্যমান আপডেট আপনারা পাবেন। তিনি বলেন, যেখানে যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নির্বাচনি তদন্ত কমিটি আচরণবিধি না মানলে সংশ্লিষ্টদের শোকজ করছে। তবুও সেকেন্ড টাইম করলে এখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন প্রার্থীদের চাপে রয়েছে- এমন বিষয় উত্থাপন করা হলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন জেলা সফর করেছে। তাদের মেসেজ হচ্ছে, কোনোভাবেই যেন পক্ষপাত আচরণ না হয়। আপনারা অচিরেই দেখবেন, তারা স্বাভাবিকভাবে প্রচার চালাতে পারবেন। মামলা, প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে।

প্রার্থিতা বাতিলের হুঁশিয়ারি ইসির : নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলা ঘুরে আসছি। আচরণবিধি বাস্তবায়ন হচ্ছে। শনিবার আমরা কিছু কঠোর সিদ্ধান্তের আলোচনা করেছি। আরও কিছু তথ্য চেয়েছি। আগামীকালকে (আজ) পেলে দেখবেন কিছু কঠোর সিদ্ধান্তে চলে যাব। তিনি বলেন, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক মারা গেছে। আমরা কঠোর সিদ্ধান্তে চলে যাব। কোনো রকম ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বড়-ছোট সবাইকে একইভাবে দেখছি। সেক্ষেত্রে আমরা নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাঠে নিরপেক্ষ অবস্থান আছে। কোনো শঙ্কা, ভয়ভীতি বা আনুকূল্য নেই। আমাদের চরম নিরপেক্ষতার জন্য কেউ রেহাই পাবে না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার করে যাব।

পুলিশ কেন অবেহলা করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের সাবেক এ সচিব বলেন, যে ঘটনা শোনলাম এটা কিন্তু সকালে তিনি বাড়ি থেকে কোনো একটা জায়গায় যাচ্ছিলেন, পথে তাকে আক্রমণ করা হয়েছে। তারা উভয়েই একই বংশের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তা রয়েছে। কিছুদিন আগেও তাদের মধ্যে একটা ঘটনা ঘটেছিল, সে কারণেই হয়েছে, নাকি নির্বাচনের কারণে হয়েছে- এ বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। নির্বাচনের কারণে অনেকে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয়টিও সামনে আনছে। তিনি আরও বলেন, আমরা নিরপেক্ষতার সঙ্গেই দেখব। এখানে যে কারও মৃত্যুই অনাকাক্সিক্ষত। এভাবে মৃত্যু, একটা মৃত্যুও আমরা চাই না। এ জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। একটু সময় দেন। বাকিটা আপনারা দেখবেন।

সংবাদ সংগ্রহে বাহারের বাধা : ডিসি-এসপিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলল ইসি : কুমিল্লা-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়া ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার ঘটনা তদন্ত করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রতিবেদন দিতে নির্দেশে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতিবেদন দিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ইসির উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান নির্দেশনাটি পাঠান। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয় সংসদের কুমিল্লা-৬ নির্বাচনি এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশে গণমাধ্যম কর্মীদের সংবাদ সংগ্রহে বাধা প্রদান এবং তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল, লাঞ্ছিত বা গ্রহার করার বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। বাহারকে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এর আগেও একাধিকবার শোকজ করেছিলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি।

কুমিল্লা : রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করে ও সরকারি বাসভবনে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমনকে শোকজ করা হয়েছে। গতকাল নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি এ শোকজ করে। এ বিষয়ে ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি, কুমিল্লা-১ আসনের অস্থায়ী কার্যালয়ে সশরীরে বা উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এমপি বাহারকে শোকজ : কুমিল্লায় একাত্তর টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক ও ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলার ঘটনায় কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপিকে শোকজ করা হয়েছে। আজ ২৪ ডিসেম্বর তাকে অথবা তার উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি কুমিল্লা-৬ এর অস্থায়ী কার্যালয়ে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর কুমিল্লা-৬ সংসদীয় আসনে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন ইকবাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়।

পাবনা সদর আসনে নৌকার প্রার্থীকে শোকজ : পাবনায় নৌকার প্রতিকৃতি তৈরি করে আলোকসজ্জা ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণা চালানোয় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে পাবনা-৫ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপিকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। আজ (২৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় সশরীরে নিম্নস্বাক্ষরকারীর খাস কামরায় উপস্থিত হয়ে নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি।

দিনাজপুর : নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে করা কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব দিলেন আদালতে হাজির হয়ে দিনাজপুর-৩ সদর আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবালুর রহিম। গতকাল নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদেকিন হাবিবের আদালতে হাজির হয়ে লিখিতভাবে জবাব দেন নৌকার প্রার্থী ইকবালুর রহিম। ইকবালুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে অভিযোগ করা হয়েছিল তার জবাব দিয়েছি। আদালত আমার প্রতি সন্তুষ্ট।

চট্টগ্রামের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি না মানার অভিযোগ : চট্টগ্রামের প্রার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আচরণবিধি মানছেন না বলে অভিযোগ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ৯টি আসনের প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রার্থীদের নির্বাচনি বিধিমালা-২০০৮ পালনের নির্দেশ দিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাহিনী কী কী ব্যবস্থা নিয়েছি সেসব বিষয়ে প্রার্থীদের জানিয়েছি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, মতামত ও পরামর্শ শুনেছি। প্রার্থীদের নানা প্রশ্ন ছিল তারা তা উপস্থাপন করেছেন। দু-একটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। যেসব বিষয়ে প্রত্যেকটির সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়ছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে আবুল বাসার বলেন, প্রার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আচরণবিধি মেনে চলছেন না। তারা যেসব সমাবেশ ও জনসভা করছেন এর পারমিশন নেওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী সমাবেশ করার ২৪ ঘণ্টা আগে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানোর কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, গত নির্বাচনের বেশকিছু জায়গায় এনালাইসিস করেছি, কোথায় কোথায় ঝামেলা ছিল। সেগুলো আমরা খুঁজে নিয়েছি। এগুলোকে কেন্দ্র করে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করব। সেসব জায়গায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে অভিযান পরিচালনা করেছি। ১৫টির মতো অস্ত্র আমরা উদ্ধার করেছি। অবৈধ অস্ত্র যারা ব্যবহার করে তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে আমরা তল্লাশি চালিয়েছি।

সর্বশেষ খবর