রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রতিবাদী পদযাত্রা

স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে কাঁদলেন, কাঁদালেন মিজান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাসে-ট্রেনে নানা স্থাপনায় আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনাসহ সাম্প্রতিক নাশকতার প্রতিবাদে ‘আমরাই বাংলাদেশ’ ব্যানারে পদযাত্রা করেছে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিল্পী, সাহিত্যিক, ক্রীড়াবিদ, শ্রমিক, সাংবাদিকসহ সর্বশ্রেণির মানুষ। গতকাল পদযাত্রাটি বেলা ১১টা ২০ মিনিটে শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে দোয়েল চত্বর, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রায় সবাইকে কাঁদিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন সম্প্রতি অগ্নিসন্ত্রাসে স্ত্রী-সন্তান হারানো মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমি জাতির কাছে বিচার দিতে এসেছি। যারা আমার স্ত্রী-সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়। আমি স্ত্রী-সন্তান হারিয়েছি। আমাকে লাশ বহন করে নিয়ে যেতে হয়েছে। যে সন্তানকে সুন্দর করে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। তাকে আর কোলে নিতে পারি নাই। লাশ কোলে নিয়ে বাড়িতে যেতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বিচার দাবি করি।

অগ্নিসন্ত্রাসের হুকুমদাতাদের বিচার দাবি করে ২০১৩ সালে শাহবাগে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় হাত ঝলসে যাওয়া ভুক্তভোগী খোদেজা নাসরীন বলেন, আমি ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর আমার কর্মস্থল থেকে যখন শাহবাগ এসে পৌঁছাই, তখন আমরা সব যাত্রী চিৎকার করছিলাম। আমার দুটি হাত ঝলসে গেছে। তারপর আমার এই দুই হাতে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগেছি বেশ কিছু দিন। এ অগ্নিসন্ত্রাসের হুকুমদাতাদের বিচার করতে হবে। আজকে অগ্নিসন্ত্রাসে আমার মায়ের বুকে পোড়া শিশু, রেললাইন কেটে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত হরতাল অবরোধের নামে যেই অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করছে, তাকে না বলার সময় এসেছে।

পদযাত্রা শুরুর আগে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিহত নাহিদের মা রহিমা বেগম বলেন, আমার ছেলে বাসায় আসার পথে বাসে আগুন দেয়। সেখানে আমার ছেলে মারা যায়। কেন এই অগ্নিসন্ত্রাস? এই স্বাধীন দেশে কী আমাদের নিরাপদে পথ চলার অধিকার নাই? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই!

জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ। অগ্নিসন্ত্রাস সেই শান্তির বিরুদ্ধে। তাই আমরা প্রতিবাদ করতে একত্রিত হয়েছি। আর এই অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্যে আরও বেশি ক্ষতিকর। আমাদের পণ্যের সঙ্গে সঙ্গে লোকবলেরও প্রাণহানি ঘটে। ফলে আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হয়।

চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, এ রকম বাংলাদেশ আমরা কেউ চাই না। আজকে যখন ট্রেনের ভিতর মায়ের কোলে শিশু আগুনে মারা যায়, তখন আমাদের বলতে হয় এ আসলে রাজনীতি নয়, এটা অন্য কিছু। এই অন্য কিছু স্বাধীন বাংলাদেশে আর দেখতে চাই না। যথেষ্ঠ হয়েছে। ত্রিশ লাখ মানুষ তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে একটি পতাকা এনে দিয়েছে। আর সেই বিজয়ের মাসেই যখন এরকম নাশকতা হয়, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এই নাশকতা করে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত। চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার বলেন, আমরা নাশকতা চাই না। আমরা আমাদের সন্তান, জানমালের সুরক্ষা চাই। কিছুদিন আগে রেলের মধ্যে এক মা তার সন্তানকে কোলে জড়িয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। আমরা আসলে এ রকম নাশকতা চাচ্ছি না।

অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ নারী সমাজ ব্যানারে পদযাত্রায় অংশ নেওয়া মারিয়া বেগম বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে দেশ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। সেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য ২০১৩ সাল থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। বারবার মানুষ পুড়িয়ে মেরে দেশকে অস্থিতিশীল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে তারা বাধাগ্রস্ত করতে আবারও সেই অগ্নিসন্ত্রাসের রূপ ধারণ করেছে। আমরা তাদের বিচার দাবি করছি। এবং তাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করছি।

পদযাত্রা শেষে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশে প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আজকে আমরা সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে একত্রিত হয়েছি, নাশকতাকে না বলার জন্য। আপনারা জানেন কীভাবে বাসে, ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন ট্রেনে আগুন দিয়ে শিশুসহ মাকে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো রাজনীতি হতে পারে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা আইনের আওতায় এনে অগ্নিসন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

পদযাত্রা শুরুর আগে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেড়ারেশন ‘নির্দেশনা’ নামে একটি পথনাটক পরিবেশন করে।

আমরা বাংলাদেশ ব্যানারে পদযাত্রায় সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করে- ‘দেশের পক্ষে খেটে খাওয়া কৃষক সমাজ’, ‘ক্রীড়াসঙ্গ’, বাংলাদেশ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, হিজড়াদের সংগঠন-হোপ অ্যান্ড পিস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন, সুস্থ জীবন, পদ্ম কুঁড়ি হিজড়া সংঘ, সচেতন হিজড়া অধিকার যুব সংঘ, শান্তির নীড় হিজড়া সংঘ, নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন-আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নারী উদ্যোক্তারা, আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুব সমাজ, রিয়েল ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় ইমাম সমাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, ব্যাংকার্স কমিউনিটি, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল, অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ নারী সমাজ, নিপীড়নবিরোধী বুদ্ধিস্ট কমিউনিটি, সংহিতাবিরোধী ক্রীড়াবিদ ফোরাম, বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ ও সুশীল সমাজ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শিল্পীসমাজসহ আরও অনেকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির শিল্পীরাও এতে অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর