বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পঞ্চগড়ে দখল দূষণে ধুঁকছে ৪৬ নদনদী

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ে দখল দূষণে ধুঁকছে ৪৬ নদনদী

উত্তরের হিমালয়ান সমতল ভূমিবেষ্টিত অঞ্চল পঞ্চগড় জেলা। এজন্য এ জেলাকে হিমালয়কন্যা বলা হয়। নদী গবেষকদের মতে, এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় ৪৬টি নদনদী। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে এর সংখ্যা ৩৩।

পাহাড়ি সমতল অঞ্চল হওয়ায় কিছু নদী বয়ে এসেছে ভারতের পর্বতাঞ্চল থেকে। ২৯ নদীর উৎপত্তি ঘটেছে এ জেলার খাল-বিল থেকে। বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলার ওপর দিয়ে এত নদী প্রবাহিত হয়নি। তাই অনেকে পঞ্চগড়কে নদীর জেলা বলে থাকেন।

এ নদীগুলো সুদীর্ঘকাল ধরে এই জেলার সংস্কৃতি ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে আসছে। নদীগুলোর অপার প্রতিদানে এ জেলার মাটি  অত্যন্ত উর্বর। জেলার পানি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং সুস্বাদু। তাই এখানে সব ধরনের ফল-ফসলের আবাদ হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে এ নদীগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী। মরা নদীতে রূপান্তরিত হচ্ছে নদ-নদী। স্থানীয়রা বলছেন, এক যুগ আগেও এসব নদীতে সারা বছর পানি থাকত। পাওয়া যেত নানা ধরনের দেশি মাছ। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ নদ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এখন নদীতে হচ্ছে বোরোর আবাদ। আর এ সময় ব্যবহার করা হচ্ছে অতিরিক্ত সার এবং কীটনাশক। এর প্রভাবে পানি থাকার সময় মাছের প্রজনন হচ্ছে না। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে চাষাবাদের ফলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী। ফলে নদীর গতিপথও বদলে যাচ্ছে। পঞ্চগড়ে আন্তসীমান্ত নদনদী ৮টি। এগুলো হলো- মহানন্দা, করতোয়া, ডাহুক, তালমা, টাঙ্গন, ঘোড়ামারা, বুড়িতিস্তা এবং নাগর। তালিকাবহির্ভূত আন্তসীমান্ত ৯টি নদী হলো- বেরং, কুড়ুম, চাওয়াই, ছোট যমুনা, পাঙ্গা, আলাইকুমারী, ভাতা, গোবরা এবং সাঁও। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন খালবিল থেকে উৎপত্তি হওয়া নদীগুলো হলো- ভেরসা, খরখরিয়া, ঘাগরা, বোরকা, ঝিনাইকুঁড়ি, ছেতনাই, শিঙ্গিয়া বা বহু নদী, হুয়ারী বা হঠাৎ নদী, কাঠগিরি, বাঘমারা, ডারি, চিলকা, বহিতা, শালমাড়া, তিস্তা, ভাঙ্গা, পাইকানী, পাম নদী, পাথরাজ, আতরাই, ভুল্লি, পাথরাজ, রসেয়া, তীরনই, রণচ-ী, জোড়াপানি, সুই নদী, পেটকি এবং দারা। এ ছাড়া কালিদহ এবং পাইলাভাসা নামেও দুটি নদী প্রবাহিত হয়েছে। অন্য কোনো জেলায় এত নদী প্রবাহিত হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ডাহুক নদ। ওই এলাকার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এ পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। অনুরূপভাবে তালমা নদীর পাশেই গড়ে উঠেছে কয়েকটি বাজার। এ বাজারের সব ময়লা ফেলা হচ্ছে নদীতে। হাঁড়িভাসা ও চাকলা বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে কুরুম নদীতে। বোদা উপজেলা শহর গড়ে উঠেছে পাথরাজ নদীর তীরে। উপজেলা শহরের সব হোটেলসহ সব ধরনের দোকানপাটের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। ফলে নদীটি এখন মরে যাওয়ার পথে। দেবীগঞ্জ এবং পঞ্চগড় শহর গড়ে উঠেছে করতোয়া নদীর তীরে। এ দুই বৃহৎ শহরের সব ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে করতোয়ায়। হাসপাতাল, ক্লিনিকের ময়লা আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে নদীতে। গোবরা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে সীমান্ত উপজেলা শহর তেঁতুলিয়া। এ শহরের সব ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় এ নদীতে। নদীটি এখন প্রায় মৃত।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা জরুরি। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা দরকার।

সর্বশেষ খবর