সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিপর্যস্ত জনজীবন

চার জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, কুয়াশায় ফিরে গেল দুই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, বন্ধ ফেরি চলাচল, বৃষ্টির পূর্বাভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারিতে এসে জেঁকে বসেছে শীত। হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু উত্তরের জনপদ। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের চার জেলার ওপর দিয়ে। সারা দিনেও মিলছে না সূর্যের দেখা। ঘন কুয়াশার কারণে  গতকাল সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরে গিয়ে কলকাতায় অবতরণ করে দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরেও সাড়ে তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফ্লাইট ওঠা-নামা। কুয়াশার কারণে শনিবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গতকাল রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮.৮ ডিগ্রি, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গায় ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজ সারা দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে অনেক স্থানে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। আগামীকাল তাপমাত্রা হেরফের হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশা থাকতে পারে দুপুর পর্যন্ত। ১৭ জানুয়ারির পর বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, শীতে ভয়াবহ কষ্টে আছে হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ। একদিকে নেই পর্যাপ্ত গরম কাপড়, অন্যদিকে কাজে বের হতে না পারায় ক্ষুধার জ্বালা। কমে গেছে কাজও। জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য আসতে গড়িয়ে যাচ্ছে দুপুর। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। বেশি আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধরা। হবিগঞ্জের ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে শিশুদের জন্য ৫০টি শয্যা থাকলেও শতাধিক শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। গত এক সপ্তাহে ওয়ার্ডটিতে ভর্তি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক শিশু। শীতে হাসপাতালটিতে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তবে ধানের বীজতলা বাঁচাতে এই কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে জমিতে তৎপর রয়েছে কৃষক। নীলফামারী জেলায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে বোরোর বীজতলা পলিথিনে মুড়িয়ে রাখতে দেখা গেছে। তবুও কুয়াশা আর তীব্র শীতে উপজেলার অধিকাংশ বীজতলা নষ্টের পথে।

গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। চলমান শৈত্যপ্রবাহে নাকাল এ অঞ্চলের মানুষ। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। প্রায় সপ্তাহ ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ আবহাওয়া আরও দু-তিন দিন থাকতে পারে। এদিকে, কনকনে শীতে বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের জনজীবন। কুয়াশায় দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও বয়স্ক মানুষ। গতকাল কাজের সন্ধানে দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠীতলা মোড়ে আসা আবদুর রহিম জানান, শীতের সকালে গত দুই দিন ধরে এখানে বসে থেকে চলে যাচ্ছি, কাজ পাচ্ছি না। ঠান্ডার কারণে অনেকে কাজও করাতে চায় না। অটোচালক ফারুক জানান, শীতের কারণে মানুষ বেশির ভাগ কাজ বন্ধ রেখেছে। বাড়ির বাইরে প্রয়োজন ছাড়া বের হয় না, তাই ভাড়া পাওয়া যায় না। ঢাকা, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকায় ভোরে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের কাজে ছুটতে দেখা গেছে। শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসিন্দা নুসরাত জাহান বলেন, এই শীত ও কুয়াশার মধ্যে চার বছরের বাচ্চা নিয়ে দুই দিন ভোরে স্কুলে গিয়ে দুজনেরই ঠান্ডা লেগে গেছে।

গতকাল বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর