বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত

নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলে বিরোধ মেটাতে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সৃষ্ট বিরোধ মেটাতে মাঠে নামছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা খুব শিগগিরই জেলা-উপজেলায় সফরে যাবেন।

গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ এবং আরও শক্তিশালী করতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বর্ধিত সভা করবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে উত্তর-দক্ষিণ শাখার থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো দ্রুত সম্পন্ন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বেলা সাড়ে ৩টায় যৌথসভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। পরে শুরু হয় আলোচনা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বৈঠকে সারা দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সব থানা-ওয়ার্ড-ইউনিয়ন শাখার দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের সব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভোট বর্জন করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে এবার দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও মাঠে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। এতে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে বিপক্ষে অনেক জায়গায় বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। শুরু হয় নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যা ভোটের পরেও অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো ঘটছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের ঘটনা।

দলীয় সূত্র জানায়, যৌথসভায় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি উঠে আসে। অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে যে সাংগঠনিক ক্ষত তৈরি হয়েছে তা দ্রুত নিরসন করে দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ, সৃশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করার তাগিদ দেন। এতদিন কোনো হস্তক্ষেপ করা না হলেও এখন থেকে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কঠোর অ্যাকশনে যাবে, এমন কড়া বার্তা দ্রুত তৃণমূল নেতাদের মধ্যে প্রেরণেরও পরামর্শ দেন।

সূত্র জানায়, যৌথসভায় এসব নিয়ে আলোচনার পর দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এ সময় সাংগঠনিক টিমের সারা দেশে সমস্যাসঙ্কুল জেলাগুলোতে ঝটিকা সফরের মাধ্যমে বর্ধিত সভা করে নৌকার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একসঙ্গে বসিয়ে সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যতে কেউ কাউকে বিরোধিতা করবে না এমন অঙ্গীকারনামা আদায়ের ব্যাপারেও আলোচনা হয়। জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে এসব সাংগঠনিক কার্যক্রম চূড়ান্ত করা হবে। জানা গেছে, বৈঠকে জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফরের একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করতে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের বলা হয়। নির্বাচনের পর যেসব আসনে সাংগঠনিক সমস্যা প্রকট, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটেছে তা চিহ্নিত করে একটি রিপোর্ট তৈরি করতেও বলা হয়েছে। সারা দেশে সাংগঠনিক সফরের সময় টিমের সিনিয়র নেতারা ওইসব জেলায় বিশেষ বর্ধিত সভা করে সব ভেদাভেদ-বিভক্তি মিটিয়ে ফেলে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আগের মতো ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার প্রয়াস চালাবেন। যেসব এলাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ কেউ অমান্য করলে সেক্ষেত্রে তাদের ক্ষেত্রে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হবে না আওয়ামী লীগ।

সম্মেলনের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো থানা-ওয়ার্ড কমিটি করতে পারেনি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে এ নিয়ে অনেকবার আলটিমেটামও দেওয়া হয়েছিল সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের। তাতেও কাজ হয়নি।

 

সর্বশেষ খবর