বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

চাঁদাবাজির টাকার হিস্সা চাওয়ায় খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে বন্ধুর নির্যাতনে বন্ধু খুন ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা রাব্বিসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- আফতাব উদ্দিন রাব্বি, সজীব, রাজীব, হীরা, ফিরোজ, আলমগীর ঠান্ডু, আমির, রনি, দেলোয়ার দেলু, শিপন, মাহফুজ ও রতন শেখ। নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর রাব্বিসহ তার পাঁচ সহযোগী সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিল। তাদের ঝিনাইদহ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোলা থেকে অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি রাতে রাব্বি তার বন্ধু সাইফুল ইসলাম ওরফে রাসেলকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তৈলঘাটে পারভীন টাওয়ারের নিচ তলায় তার নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। রাসেল তার বন্ধু রাব্বির অফিসে হাজির হলে সেখানে উপস্থিত রাব্বির নেতৃত্বে অন্য বন্ধুরা রাতভর রাসেলকে এলোপাতাড়িভাবে লাঠিসোঁটা দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করে মারাত্মক জখম করে। কাঁচি দিয়ে রাসেলের মাথার চুল কেটে দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাত ২টার দিকে রাসেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাব্বির নির্দেশে ৪/৫ জন লোক রাসেলকে অজ্ঞান অবস্থায় তার বাসায় পৌঁছে দেয় এবং রাসেলের স্ত্রীকে এ বিষয়ে থানা পুলিশ বা কাউকে ঘটনার বিষয়ে না জানানোর জন্য হুমকি প্রদান করে।

রাব্বির অফিসে নিহত রাসেলকে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় রাব্বিকে প্রধান আসামি করে ১৩ জন এজাহারনামীয়সহ আরও অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একটি টিম গঠন করা হয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল রাব্বির অফিসে গিয়ে হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহারনামীয় আসামি ছাড়াও তদন্ত টিম ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের শনাক্ত করে। পরবর্তীতে ওই টিম তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আফতাব উদ্দিন রাব্বিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরও সাতজনকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানা যায়, চাঁদাবাজির টাকার হিস্সা চাওয়া ও পারস্পরিক মতবিরোধের জেরে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এ ঘটনার জের ধরেই রাব্বির নেতৃত্বে তার সহযোগীরা রাসেলকে হত্যা করে। প্রাণে বাঁচতে বন্ধুকে বাবা ডাকার পরও নিস্তার মেলেনি নির্যাতন থেকে। এদিকে এ ঘটনায় রাসেল হত্যার প্রধান আসামি রাব্বির সঙ্গে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদুর রহমানের সখ্য থাকার অভিযোগে তাকে ইতোমধ্যেই ক্লোজ করেছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। রাসেলের স্ত্রী সুমী বেগম এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রানা, রাকিব ও বাপ্পিসহ আরও ৫-৬ জনকে গ্রেফতারের দাবি জানান। তিনি বলেন, তার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই যারা তড়িঘড়ি করে দাফন করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানা গেছে, রাব্বি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ঘটনার পর তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাসেলের পরিবারের দাবি, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে ‘টর্চার সেল’ বানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাব্বি। চাঁদা না পেলে তার ‘আব্বা বাহিনী’ দিয়ে মানুষকে তুলে এনে সেখানে নির্যাতন চালানো হতো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর