রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেড়েছে ৪ টাকা অভিযানে কমল ২ টাকা

রাশেদ হোসাইন

বেড়েছে ৪ টাকা অভিযানে কমল ২ টাকা

ভরা মৌসুমে চালের দাম নিয়ে চালবাজি চলছে। দাম বাড়ার জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা দোষারোপ করছেন মিলারদের আর মিলাররা দোষারোপ করছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। সরকারের নানা চেষ্টার পরও চালের বেড়ে যাওয়া দাম কমানো যায়নি খুচরা পর্যায়ে। এ বিষয়ে বাবুবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, যে পরিমাণে চালের দাম বেড়েছে, অভিযানে সে তুলনায় দাম কমেনি। চালের দাম বেড়েছে ৪ টাকা আর বিভিন্ন অভিযানের পর দাম কমেছে ২ টাকা। গতকাল রাজধানীর চালের বড় আড়ত বাবুবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ২৮ চাল বা মোটা চালের পাইকারি দাম আগে ছিল প্রতি কেজি ৪৮ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে তা বেড়ে হয়েছে ৫২ টাকা। অভিযানের পরে পাইকারি পর্যায়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫১ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য চালের দাম এর থেকে বেশি বেড়েছে। বাবুবাজারের মেসার্স হক রাইস এজেন্সিতে গতকাল মিনিকেট (সিরাজ) ৬৬ টাকা, মিনিকেট (দাদা রাইস) ৬৬ টাকা, মিনিকেট (রাজ্জাক) ৬০ টাকা, বাসমতি (সিরাজ) ৭৪ টাকা, কাটারি চাল ৬৫ টাকা, ২৮ চাল ৫১ টাকা, নাজির ৬৮ টাকা দরে চাল বেচাকেনা হতে দেখা যায়। মেসার্স ভূঁইয়া রাইস এজেন্সিতে দেখা যায়- মিনিকেট (দাদা রাইস) ৬৬ টাকা, মিনিকেট (মজুমদার) ৬৫ টাকা, মিনিকেট (ডলপিন) ৬৪ টাকা, মিনিকেট (ইউনুছ) ৬০ টাকা, মিনিকেট (বনফুল) ৫৮ টাকা, ২৮ চাল ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নাজির বিভিন্ন প্রকারভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাসমতি ৭৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর শ্যামবাজারের চালের দোকানদার আসিফ রহমান বলেন, ‘বাজারে চালের দাম বেড়ে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। দাম কমার কোনো আভাস এখনো পাইনি। শুনেছি পাইকারি পর্যায়ে ২ টাকা কমেছে, তবে খুচরা পর্যায়ে এখনো দাম কমেনি। খুচরা বাজারে গতকাল মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৩-৫৫ টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও বিআর ২৮) কেজি ৫৬-৬০ টাকা এবং সরু চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) ৬৮ থেকে ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে চালের বাজার অস্থির হতে শুরু হয়। দাম বাড়ায় ব্যবস্থা নিতে খাদ্য অধিদফতর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারে অভিযানে নামে। কিন্তু মানভেদে চালের দাম পাইকারিতে প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমলেও খুচরায় এর প্রভাব পড়েনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম খান বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে চালের দাম বেড়েছে। তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন করেছে। এবার প্রতিযোগিতা করে ধান ক্রয় করেছে। বিশাল পরিমাণে ধান মজুত করেছে হাতে গোনা কিছু ব্যবসায়ী। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে এবার দাম বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিক চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা বেশি দাম বাড়িয়ে অল্প কিছু কমালেও তাদের লোকসান হয় না।

চালের বাজার অস্থির করেন মিলাররা : ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেছেন, উত্তরবঙ্গের মিল মালিকরা এসএমএসের মাধ্যমে চালের বাজার অস্থির করে ফেলেন। তারা যেখানে চালের বাজার অস্থির করছে সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। গতকাল বরিশাল নগরীর ফরিয়াপট্টিতে চালের আড়তে অভিযানকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বরিশালের আড়তদাররা উত্তরবঙ্গের মিল থেকে যে দরে চাল কিনেছেন সেই দরের সঙ্গে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করবেন। ট্রাক ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ না বাড়লেও বরিশালের আড়তে প্রতি কেজি চালের দাম ৪ টাকা ব্যবধান পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার নতুন কৌশলে কাজ করবে। এবার কোন উৎস থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটানো হচ্ছে তা অনুসন্ধান করবেন তারা।

অভিযান শেষে নগরীর ফরিয়াপট্টিতে বরিশালের চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই ও বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর