রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

৭৭১ নারীর সঙ্গে চ্যাট করে আনোয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। বয়স ৩০ বছর। গাইবান্ধা সদরের খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হওয়ার পর আর পড়াশোনা করেননি। তবে ফেসবুকে তার নানারকম পরিচয়। কখনো রাষ্ট্রপতি, কখনো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশের ওসি, অভিনেতা থেকে শুরু করে বিভিন্নজনের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে আনোয়ারের। সাইবার প্রতারণার অভিযোগে আনোয়ারকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। গত শুক্রবার গাইবান্ধা সদর থানার ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতারক আনোয়ার হোসেনের বাবার নাম সাইদ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা সদর থানার খোলাবাড়ীতে। পুলিশ জানায়, তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের নাম ও ছবি ব্যবহার করে আনোয়ার একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলেন। মূল আইডি থেকে ছবি ও স্ট্যাটাস নিয়ে ভুয়া এই আইডিতে নিয়মিত পোস্ট করতেন। ওসি মহসীনের অভিযোগের সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন পরিচয়ে ৭৭১ জনের সঙ্গে আনোয়ারের চ্যাট করার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, প্রবাসী, মডেল সবাই আছেন তার এই তালিকায়। প্রথমে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলার পর হোয়াটসঅ্যাপেও তাদের সঙ্গে কথা বলেন আনোয়ার। তবে কারও সঙ্গে ভিডিও কলে আসতেন না। কেউ তাকে দেখতে চাইলে কিংবা সন্দেহ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ব্লক করে দিতেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ‘আপত্তিকর’ কথাবার্তা বলা। গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। তিনি বলেন, আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদ মহসীন (MD Mohshin) নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি চালিয়ে আসছেন। ওই আইডিতে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের মূল আইডির হুবহু ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করেন তিনি। এ ব্যাপারে ওসি মহসীন গত ২২ জানুয়ারি নিজেই তেজগাঁও থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। ওসি মহসীন আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতির নামেও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন আনোয়ার। তার এই ভুয়া আইডির তালিকায় আছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান, অভিনেতা ও মডেল আবদুন নুর সজল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে রাষ্ট্রপতি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আইডি বর্তমানে ডিজঅ্যাবল অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাকিগুলো সবই সচল আছে।

নায়িকা হতেও আনোয়ারের কাছে ধরনা

চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলেন আনোয়ার। ওই আইডিতে নিজেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে দাবি করেন তিনি। সেই পরিচয় দেখে তার সঙ্গে বিভিন্ন মেয়ে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলেন। মূলত নায়িকা হওয়ার জন্যই তারা যোগাযোগ করতেন। আনোয়ার নায়িকা বানাবেন বলে তাদের ছবি পাঠাতে বলতেন। ছবি দেখে কাউকে কাউকে নায়িকা বানানোর আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন কথা চালাতে থাকেন।

ইউটিউব দেখে দেখে ফেসবুক মাস্টার

আনোয়ার চাকরি করেন ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে, প্রিন্টিং মেশিনের হেলপার হিসেবে। প্রিন্টিং প্রেসে কাজের ফাঁকে তিনি ইউটিউব দেখে ফেসবুকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কলাকৌশল শেখেন। খোলাবাড়ী গ্রাম ও দাশ বেকারি মোড় এলাকায় তিনি ‘ফেসবুক মাস্টার’ নামেই পরিচিত। আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করা, পেজ ভেরিফিকেশন, রিপোর্ট কিংবা স্ট্রাইক খাওয়া পেজ রিকভারসহ ফেসবুকের যে কোনো সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে ওঠেন আনোয়ার।

মেয়েদের ফেসবুক আইডি-পাসওয়ার্ড হ্যাক

কারও ফেসবুক আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করে দেন আনোয়ার। এজন্য তার কাছে বিভিন্ন মেয়েরা আইডি, পাসওয়ার্ড উদ্ধারের জন্য যোগাযোগ করতেন। কিন্তু যেসব আইডি তিনি উদ্ধার করে দিতেন সেগুলো সব আনোয়ারের হয়ে যেত! পরে আনোয়ার সে আইডি ব্যবহার করতেন। যেসব আইডি একটু পুরনো হয়েছে সেসব আইডির নাম পরিবর্তন করেই গণ্যমান্য ব্যক্তির নামে ভুয়া আইডি খুলতেন। এসব ভুয়া আইডি রিপোর্ট করে বন্ধ করলেও কিছুদিন পর আবারও তা রিকভার করে ফেলেন আনোয়ার।

সর্বশেষ খবর