রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কিছুতেই কমছে না দ্রব্যমূল্য

♦ আজ বাড়ছে চিনি তো কাল তেল, পরদিন বাড়ে আরেক পণ্যের দাম ♦ এক বছরে ধনিয়ার দাম বেড়েছে ৭৯ ভাগ, আদা ৬১ ভাগ

রাশেদ হোসাইন

পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং সরকারের নানা রকম পদক্ষেপের পরও নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেলেও চাহিদার সব পণ্য নিয়ে বাসায় ফেরা যাচ্ছে না। ৫০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হাঁসফাঁস তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। চালের মজুতদারদের থামাতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করেছে খাদ্য অধিদফতর। এ ছাড়া দেশব্যাপী প্রতিদিন অভিযানে ব্যস্ত রয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযান চালাচ্ছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। এর পরও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না দ্রব্যমূল্য।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর গতকালের তথ্য অনুসারে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় মোটা চালের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। আলুর দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ৯১ শতাংশ। মুগ ডালের দাম বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। ছোলার দাম বেড়েছে ২০ শতাশ। আমদানি রসুনের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া আমদানি হলুদের দাম বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দেশি আদার দাম বেড়েছে ৬০ দশমিক ৬১ শতাংশ। জিরার দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এলাচের দাম বেড়েছে ৬৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। ধনিয়ার দাম বেড়েছে ৭৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। খেজুরের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ফার্মের ডিমের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। শীতের এ সময় দেশের বাজারগুলো নানানরকম শাকসবজিতে ভরা থাকে। দামও থাকে কম। কিন্তু বর্তমানে ভরা মৌসুমেও দাম দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, এটা সবজির মৌসুম। বাজারে কোনো সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে নেই। গতকাল রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে সবজির দামের এ চিত্র দেখা গেছে। বাজারে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপিও। এ ছাড়া প্রকারভেদে প্রতি কেজি টম্যাটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০, শিম ৬০ থেকে ৮০ ও বেগুন ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে মুলা ৪০ টাকায়। পেঁপে ৪০-৫০, বরবটি ১০০, শালগম ৪০, শসা ও খিরা ৬০ টাকা কেজি। লাউ ৫০-৮০ টাকা পিস, কুমড়া আকারভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের বাজারে এখনো অস্থিরতা চলছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকায়। মাংসের বাজারে দেখা যায়, সরকার গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও কেউ সে কথা শুনছে না। নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বর্তমানে ৭৫০ টাকা কেজি, কোথাও আরও বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লেয়ার ও সোনালি মুরগির কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে স্থানভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি এবং খাসির মাংস আগের মতোই ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

প্রতি সপ্তাহেই নতুন করে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। দামের উত্তাপে পুড়ছে নিত্যপণ্যের বাজার। আজ চিনি তো কাল তেল, পরদিন শোনা যায় অন্য আরেকটি পণ্যের দাম বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে কোনোভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ক্রেতারা বলছেন, প্রায় সব পণ্যের দামই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। যার কারণে জনজীবনে দুর্ভোগের শেষ নেই। বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকায় খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে।

নিত্যপণ্যের দামে নাকাল সবুজ রায়হান নামে ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে এলেই নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায়। সবকিছুর দামই বাড়তি। কোনো কিছুর দামই নিয়ন্ত্রণে নেই। যারা পণ্য মজুত করে রাখেন, তারাই মূলত সর্বনাশ করে থাকেন। বাজার ব্যবস্থায় কোথায় গাফিলতি হচ্ছে, আমি মনে করি দায়িত্বশীলদের সেখানে তদারকি করা উচিত।’ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমুনাফার প্রবণতার কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাইকারিতে এক দাম তো খুচরায় এক দাম। কিছুদিন আগে একটি পণ্য ২০ টাকা করে ৫ কেজির পাইকারি কিনেছি। বিকালে গিয়ে সেই দোকানের পাশেই সেই একই পণ্য ৩৫ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। এত বেশি মুনাফা করলে তো বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে। আইন দিয়েও তো কাজ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মনিটরিংয়ে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। দু-একটি অভিযান চালানোর পর সব বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে অভিযানের প্রভাব বাজারে পড়ে না। আমাদের বিকল্প আইনে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া রাস্তায় পরিবহন খরচ কমানো যেতে পারে। এজন্য রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি বাড়াতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের বাজার মনিটরিংয়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা বিশেষায়িত বাজার তৈরি করা যেতে পারে। সেখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতো সুলভমূল্যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিমসহ রমজানের অন্যান্য পণ্যসামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

সর্বশেষ খবর