রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশ্ব ইজতেমা

আজ প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত

গাজীপুর প্রতিনিধি

টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে ‘শুরায়ে নিজাম’-এর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম। এর আগে হেদায়েতি বয়ান করা হবে। বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের পাশাপাশি গাজীপুর ও আশপাশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরাও আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবেন। শনিবার পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে ৪৯টি দেশের ২ হাজার ২৭৯ জন বিদেশি মেহমান অংশ নিয়েছেন। গতকাল বাদ আসর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার বাদ ফজর থেকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে চলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষ ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকবে। আজ হেদায়েতি বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।

আখেরি মোনাজাত : বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত আজ রবিবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম। গতকাল বিকালে ইজতেমা ময়দানের ভিতরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

জিএমপি পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘রবিবার বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা এ সময়ের জন্য আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছি। আমাদের ট্রাফিকব্যবস্থা নতুন করে সাজিয়েছি। সেটা হলো, আমাদের ভোগড়া বাইপাস থেকে ইজতেমামুখী সাধারণ জনগণের কোনো গাড়ি চলবে না, তারা ডাইভার্ট হয়ে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে মীরের বাজারের দিকে চলে যাবে। তবে মুসল্লিদের গাড়ি আসতে পারবে। মীরের বাজার পর্যন্ত গাড়ি বন্ধ থাকবে, মুসল্লিদের গাড়ি ছাড়া অন্য কারও গাড়ি আসতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এলাকায় একইভাবে গাড়ি কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ডাইভার্ট করে দেবে ৩০০ ফিটের দিকে। আশুলিয়া সড়কের গাড়ি মিরপুর বেড়িবাঁধের দিকে ডাইভার্ট করে দেবে। এদিকে কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। এই হলো আমাদের ট্রাফিক পরিবর্তন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন আখেরি মোনাজাত শেষ হবে তখন আমরা প্রথম চেষ্টা করব এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভারটি আগে চালু করার জন্য। ফ্লাইওভারটি চালু হলে আস্তে আস্তে যানবাহনগুলো ভিতরে ঢুকবে, অনেক মুসল্লি দ্রুত চলে যেতে পারবেন।’

দ্বিতীয় দিনে যারা বয়ান করেন : বিশ্ব ইজতেমায় শনিবার দ্বিতীয় দিনের আমবয়ান অব্যাহত ছিল। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের ইমান, আমল ও আখলাককে পরিপূর্ণ শুদ্ধরূপে গড়ে তুলতে বয়ান শুনছেন ইজতেমার শীর্ষ আলেম ও মুরুব্বিরা। ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, শনিবার বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের (মুম্বাই) মাওলানা আবদুর রহমান। তাঁর বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুল মতিন। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোধরা। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের (হিন্দুস্তান) মাওলানা জুহাইরুল হাসান। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের (হিন্দুস্তান) মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বয়ানে ওলামায়ে কেরাম বলেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখশান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ইমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।

৭২টি যৌতুকবিহীন বিয়ে : বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ হলো যৌতুকবিহীন বিয়ে। ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, সম্পূর্ণ শরিয়ত মেনে তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার বাদ আসর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি আরও জানান, এবার ৭২ জোড়া বিয়ে সম্পাদন হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমায় আরও তিন মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমায় আরও তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে শনিবার দিন সকাল পর্যন্ত একজন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে ইজতেমা ময়দানে সাতজন, ময়দানে আসার পথে একজন পুলিশ সদস্যসহ তিনজন রয়েছেন। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তিনজন মারা যান। বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সেলের প্রধান মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন-শেরপুর জেলা সদরের জুগনিবাগ গ্রামের মৃত শমসের আলীর ছেলে নওশের আলী (৬৫), ভোলা সদর উপজেলার পরানগঞ্জের সামানদার গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (৫৫) ও নেত্রকোনা সদরের কালিয়াঝুড়ি এলাকার হোসেন আহম্মদের ছেলে স্বাধীন (৪৫)। এর আগে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মারা যাওয়া চার মুসল্লি হলেন-নেত্রকোনা জেলার সদর থানার কুমারী বাজার গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আবদুস সাত্তার (৭০), একই জেলার বুড়িঝুড়ি গ্রামের স্বল্পদুগিয়ার আবদুস ছোবাহানের ছেলে এখলাস মিয়া (৬৮), ভোলা জেলার ভোল্লা গ্রামের নজির আহমেদের ছেলে শাহ আলম (৬০), জামালপুর জেলার তুলসীপুর এলাকার পাকুল্লা গ্রামের হযরত আলীর ছেলে মতিউর রহমান (৬০)। এ ছাড়া ময়দানে আসার সময় মারা যাওয়া তিনজন হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার চৌহদ্দীটোলা গ্রামের জামান মিয়া (৪০) ও ইজতেমায় আসার পথে বাসচাপায় নিহত পুলিশ সদস্য হাসান উজ্জামান (৩০)।

 

 

সর্বশেষ খবর