রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগে অস্থিরতা তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে

মূলে চাঁদাবাজি টেন্ডার ভাগবাঁটোয়ারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও চবি প্রতিনিধি

মূলে চাঁদাবাজি টেন্ডার ভাগবাঁটোয়ারা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) টানা তিন মাস ধরে অস্থিরতা চলছে। এর পেছনের কারণ হলো টেন্ডার ভাগবাঁটোয়ারা ও চাঁদাবাজি। এ ছাড়া রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষকদের দলাদলি, ছাত্রলীগের হল নিয়ন্ত্রণ, ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে আর্থিক সুবিধা, ক্যাম্পাসে ও কেন্দ্রে নিজেদের শক্তির জানান দেওয়া। আরও রয়েছে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর সংঘর্ষ, বহিরাগত ও বহিষ্কৃত শিক্ষার্র্থীদের দাপট। সর্বশেষ গত তিন দিনে সাতবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে সংগঠনটি। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করলেও বেশির ভাগ সময় তা আলোর মুখ দেখে না। কৌশলে ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ভিসির বিরুদ্ধে। অস্থিতিশীল ক্যাম্পাসে আতঙ্কে দিন কাটছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি বেনু কুমার দে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতীতেও তদন্ত কমিটির সুপারিশে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের আগে তারা সবাই শিক্ষার্থী। কাউকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রক্টর অধ্যাপক ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, তিন সদস্যের কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। এ ছাড়া কাল (আজ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও চাপ আছে। তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী প্রক্টর মো. রোকন উদ্দিন সংঘর্ষের ব্যাপারে বলেন, ঘটনা বিশ্লেষণে আমরা একবার বসেছি। কাল (আজ) আবার বসব। আশা করছি সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, প্রায় প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষার আগে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে তোলে ছাত্রলীগের উপগ্রুপের কোন্দল। প্রথমে কথা কাটাকাটি, পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। এর মূলে রয়েছে টেন্ডার ভাগ-বাটোয়ারা, আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। অভিযোগ আছে, ভর্তি পরীক্ষার সময় উপগ্রুপগুলোকে শান্ত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহায়তা করে শাখা ছাত্রলীগ। এ ছাড়া প্রশাসনের সুবিধার্থে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে চবি ছাত্রলীগের রাজনীতি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ঘিরে আবর্তিত। সামনে কমিটি গঠন ঘিরে বিবদমান দুই গ্রুপ নিজেদের শক্তি প্রমাণে মরিয়া। এই দুই গ্রুপের রয়েছে একাকার, কনকর্ড, রেড সিগন্যাল, উল্কা, বাংলার মুখ, সিক্সটি নাইন, এপিটাফ, ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স), সংগ্রাম, বিজয় ও সিএফসি নামে বগিভিত্তিক উপগ্রুপ। সংঘর্ষের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টিগোচর হওয়ার জন্য পত্রিকার শিরোনাম হয় উপগ্রুপগুলো। এতে ক্যাম্পাসে অবস্থান জানান দেওয়া হয় বলেও ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার ছাত্রলীগকে বিভিন্নভাবে প্রতিপালন করে আসছেন। ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ছাড় দিয়ে ক্যাম্পাসে বিচারহীনতার সংস্কতি তৈরি করেছেন। ফলে সংগঠনটি ক্যাম্পাসে লাগামহীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্যের কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। গাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় বিচারের কোনো নজির সৃষ্টি না হওয়ায় এসব সংঘর্ষ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে প্রশাসন। প্রশাসন থেকে একযোগে প্রক্টরসহ ১৮ জন, তারপর আরও দুজন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। বর্তমানে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন চলমান আছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে এক শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা। এমন সময় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিলে ভিসি তাদের সহযোগিতা পাবেন না। যার কারণে তিনি নিজের চেয়ার টিকিয়ে রাখতে নীরবতা পালন করছেন বলে অভিযোগ। এদিকে তিন দিন ধরে সংঘর্ষের পর আবাসিক হলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার তল্লাশিতে কিছু কাঠ, লোহার রড ছাড়া তেমন কিছু পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল চবি উপাচার্যকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানান। এতে ইতিপূর্বে যারা এ ধরনের সহিংসতায় জড়িত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে যেন কোনো দায়ী ব্যক্তি নিষ্কৃতি না পায়, এ বিষয়ে সচেতন থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

সর্বশেষ খবর