শিরোনাম
রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগে অস্থিরতা তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে

দেন না টাকা, নেতাদের কক্ষে পাঠাতে হয় খাবার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

দেন না টাকা, নেতাদের কক্ষে পাঠাতে হয় খাবার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হল ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা দেন না ছাত্রলীগের দুই নেতা। দুবেলা খাবার তাদের কক্ষে পৌঁছে দিতে হয়। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন ও ডাইনিং পরিচালকরা এ অভিযোগ তুলেছেন।

অভিযুক্তরা হলেন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিনহাজ ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সোহান হাসান। শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর পক্ষে মিনহাজ ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের পক্ষে সোহান এ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা গতকাল রাতে বসেছিলাম। উভয়পক্ষকে ডেকে বিষয়টির সমাধান করে দিয়েছি। কিছু টাকা বাকি ছিল, আমরা দিয়ে দেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি। ক্যান্টিন পরিচালক আলতাফ হোসেনের অভিযোগ, হলে ওঠার পর থেকে টাকা না দিয়ে ক্যান্টিনে খাচ্ছেন মিনহাজ। আগের প্রাধ্যক্ষের কাছে অঙ্গীকার করেও টাকা দেননি। এখন আবার তাকে সকাল ও দুপুরে খাবার কক্ষে পৌঁছে দিতে হয়। রাতে পৌঁছে দিতে হয় সোহানকে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, মিনহাজের আগের বাকি ১৫-১৬ হাজার টাকা। এখন আর লিখি না ভাই, হতাশ! শুধু খাতা-কলম নষ্ট। প্রতিবার উনি বলেন দেব, কিন্তু দেন না। আমার হার্টে তিনটা রিং। প্রতিদিন শতাধিক টাকার ওষুধ খেতে হয়। এত কিছু বলার পরও নেতারা কেয়ার করেন না। প্রাধ্যক্ষও কার্যকর পদক্ষেপ নেন না। ডাইনিংয়ের বাবুর্চি আবদুস সামাদ বলেন, মিনহাজ ও সোহানকে প্রায় তিন মাস থেকে দুবেলা চারটা খাবার দিতে হয়। বাজার ঊর্ধ্বগতি। এভাবে আমরা আর পারি না। কতদিন এভাবে চালাতে পারব বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, আমি প্রতিদিন দুবেলা চারটা খাবার ৩০৩ ও ২১৪ নম্বর কক্ষে দিই। অন্য কর্মচারী জামাল উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আগেও প্রাধ্যক্ষকে জানিয়ে সমাধান পাইনি। তিনি শুধু বিনা টাকায় খাবার দিতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তারা জোর করে খাবার নেন। প্রাধ্যক্ষও কার্যকর পদক্ষেপ নেন না। অভিযোগের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজ ইসলাম বলেন, ক্যান্টিনে আমার এত টাকা বাকি নেই। বাকি খাচ্ছি এবং মাঝে মাঝে টাকা পরিশোধও করছি। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হয়তো বাকি থাকতে পারে। ডাইনিং থেকে কখন আমার রুমে খাবার আসে, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আরেক নেতা সোহান হাসান বলেন, ডাইনিং এবং ক্যান্টিনের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের বাকি বা অর্থনৈতিক লেনদেন নেই। আমার নামে এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এ ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ডাইনিং ও ক্যান্টিন পরিচালকরা বিষয়টি মৌখিকভাবে আগে জানিয়েছে। আমি বিনা টাকায় কাউকে খাবার দিতে নিষেধ করেছি। তারপরও খাবার দিতে যদি কেউ বাধ্য করে, তাহলে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিনহাজ ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে হলে সিট দখলের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে আবাসিক শিক্ষার্থী সাকিব, গত বছর নভেম্বরে হিমেল ও নিকোল রায়ের বিরুদ্ধে সিট দখল ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। গত ১৭ জানুয়ারি আরেক নেতা সোহানের বিরুদ্ধে আবাসিক শিক্ষার্থীর সিট দখল ও হুমকির অভিযোগ ওঠে। তাছাড়া দুই সিটের কক্ষ দখলে নিয়ে সেখানে তারা একা থাকেন। অনাবাসিক শিক্ষার্থী তুলে দখল নিয়েছেন একাধিক কক্ষ। হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন কক্ষে অভিযান এবং শিক্ষার্থীদের সিট ছাড়তে হুমকি ও চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হবিবুর রহমান হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, আগে আমাদের হলে পলিটিক্যাল ব্লক নির্দিষ্ট ছিল। যেখানে শুধু পলিটিক্যাল শিক্ষার্থীরা থাকত। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে এই হলের প্রায় সব ব্লকেই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওঠানোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। আমার নিজের রুমেও একজন ছাত্রলীগের কর্মীকে ওঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পুরো হলই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। তখন আর নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিট দেওয়ার প্রথা থাকবে না।

সর্বশেষ খবর