মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দরবেশের খপ্পরে ২৫ লাখ খোয়ালেন চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক

পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা থাকায় পরিত্রাণ পেতে গত বছর কথিত দরবেশ বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমেনা খান নামে এক চিকিৎসক। সমস্যা সমাধানের কথা বলে ভুক্তভোগী ওই নারীর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই দরবেশ বাবা। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গত বছরের ৭ নভেম্বর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন ওই ভুক্তভোগী নারী। এ মামলার সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তের এক পর্যায়ে গত রবিবার চক্রের হোতা আশিকুর রহমানকে মাগুরা থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে চক্রের আরও ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- মনিরুজ্জামান ওরফে আদর, ফকরুল, সাদ্দাম, নিরব, সিহাব, সাব্বির, সাগর, শাহিন, কামাল, আক্তার, শরীফ, নীরব, বাবলু, মিজান, রাসেল, নূর হোসেন কালু, সোহেল, নয়ন ও নীরব। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, দরবেশ বাবা পরিচয়দানকারী এই চক্রের ১৯ সদস্যকে মাগুরা ও ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে প্রতারণা করে আসছিল। এই চক্রের সদস্যরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে দুটি ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে। প্রতারকরা দৈবচয়নের মাধ্যমে বা ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত অথবা অর্থ সম্পদশালী ব্যক্তিদের দারোয়ান বা চালকের সঙ্গে সম্পর্ক করে প্রথমে। পরে চালক ও দারোয়ানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিবারের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে। এ সময় তারা পারিবারিক সমস্যাগুলো কৌশলে জেনে নিয়ে একই বাড়ির মালিক ও স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে। তারপর শুরু করে প্রতারণার খেলা। স্ত্রীর কাছে স্বামীর বদনাম এবং স্বামীর কাছে স্ত্রীর বদনাম বলে কান ভারী করে। তখন উভয়ের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং প্রত্যেকে তাদের সমস্যা নিরসনের জন্য পথ খুঁজতে থাকে। এই সুযোগে প্রতারকরা মসজিদে নববীর ইমামের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করতে থাকে।

সিআইডি প্রধান বলেন, চক্রটির দ্বিতীয় কৌশল হলো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চমকপ্রদ এবং চোখ ঝলসানো বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলুব্ধ করা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এভাবেই চক্রটি পারিবারিক সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে এক নারী চিকিৎসকের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দরবেশ বাবা পরিচয়ে কয়েক ধাপে তার কাছ থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ভুক্তভোগী ওই নারী পারিবারিক সমস্যা থাকায় মুক্তির পথ খুঁজছিলেন।

সিআইডি বলছে, ২০২০-২১ সাল থেকে গ্রেফতার ব্যক্তিরা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। প্রথমদিকে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিত। পরে তারা পত্রিকা এবং বিভিন্ন চ্যানেলের পাশাপাশি ইউটিউব ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতারণার বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে সমস্যা সমাধানের নামে ভয়ভীতি ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে এমএফএস নম্বরে টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ৪১টি মোবাইল, বিপুলসংখ্যক সিমকার্ড ও ডিজিটাল আলামত জব্দ করা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর