বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
শিক্ষকের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী

ক্ষোভে উত্তাল মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

ক্ষোভে উত্তাল মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস

সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের গুলিতে ছাত্র আহতের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত, বদলি ও বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল ও ৮১ রাউন্ড গুলিসহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গুলির ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা এবং অবৈধ দুটি পিস্তল ও গুলিসহ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কলেজে আইটেম পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক রায়হান শরীফ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলিটি তমালের ঊরুতে লাগে। আহত তমালকে মনসুর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তমাল বগুড়া শহরের ধানসিঁড়ি নাটাইপাড়ার আবদুল্লাহ আমিনের ছেলে। ঘটনার পর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষককে মারধর ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। গতকাল সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ প্রায়ই নেশাগ্রস্ত হয়ে পিস্তল নিয়ে ক্লাসে আসতেন এবং টেবিলে অস্ত্র রেখে ভীতি সৃষ্টি করতেন। বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের মোবাইলে ভিডিওকল দিয়ে হয়রানি করতেন। বিষয়টি কলেজ প্রশাসনকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক রায়হান শরীফ সিরাজগঞ্জ শহরের প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের মেডিকেল সনদ বাতিল, স্থায়ী বরখাস্তসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শিক্ষক রায়হান শরীফ নিজের ইচ্ছামতো কলেজে আসতেন। অস্ত্র নিয়েও আসতেন বিষয়টি জানার পর তাকে নোটিস করা হয়েছিল।

তিনি জানান, শিক্ষক রায়হান শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত, বদলিসহ বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, মন্ত্রীর নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থী, তার বাবা-মা ও কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককের সঙ্গেও কথা বলা শেষে তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশ করা হবে। শিক্ষার্থীর মা সেলিনা বেগম জানান, ছেলে ঠিকমতো হাঁটতে পারছে না। ছেলের মনে সব সময় আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি বলেন, আমরা মামলা করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা করছে না। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড তাজা গুলি, ৪টি ম্যাগাজিন, দুটি বিদেশি ছোড়া, ১০টি বার্মিজ চাকু, দুটি ব্র্যাশ নাকেল, একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, শিক্ষার্থীর বাবা আবদুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে একটি মামলা এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবদুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। দুই মামলায় দুপুর ২টার দিকে ডিবি পুলিশ চিকিৎসক রায়হান শরীফের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করেন। সিরাজগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ আসামি ডা. রায়হান শরীফকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিল্লাল হোসেনের আদালতে হাজির করে। এ সময় ডা. রায়হান শরীফ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাকে আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে আহত শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নেন এবং শিক্ষক রায়হান শরীফের শাস্তি নিশ্চিত করতে আশ্বস্ত করেন।

সর্বশেষ খবর