বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

গোলাগুলির তীব্রতা বেড়েছে মিয়ানমারে

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মিয়ানমারে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হচ্ছে। ঘাঁটি দখল ও পুনরুদ্ধারে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। দেশটির কাচিন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর আরও তিনটি ঘাঁটি গত রবিবার বিদ্রোহী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) ও এর মিত্র গোষ্ঠীগুলো দখল করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী। রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান   আর্মির যুদ্ধও তীব্র হয়েছে। মুহুর্মুহু গুলি, গ্রেনেড ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দে গতকালও বারবার কেঁপে উঠেছে টেকনাফ সীমান্ত। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে টেকনাফ পৌরশহর, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে টহল জোরদার রেখেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

এদিকে সীমান্তে এ অস্থিরতার মধ্যেই মিয়ানমার থেকে আসছে মাদক। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সকালে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডারডেইল ঘাটে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমার থেকে আনা ২ কেজি ১২৭ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ তিনজনকে আটক করেছে বিজিবি। বিজিবির টেকনাফের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, ক্রিস্টাল মেথ আইস ছাড়াও মিয়ানমারে সংঘাত চলাকালীন ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯০০ ইয়াবাসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়। রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি করছে বিজিবি।

টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্রযুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।

গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের কুমিরখালী, বলিবাজার, নাইচাডং, কোয়াচিদং, শিলখালী, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপুরু এলাকায় বিকট শব্দে শক্তিশালী বিস্ফোরণে বারবার কেঁপে ওঠে টেকনাফ সীমান্ত। আতঙ্কে ছোটাছুটি করেন টেকনাফ পৌর শহর, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দা। সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে কয়েক দিন ধরে আকাশ থেকে শক্তিশালী গ্রেনেড, বোমা, মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে সরকারি বাহিনী। স্থল থেকে পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দিচ্ছে আরাকান আর্মি। দুই পক্ষের তুমুল লড়াইয়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে মংডু দক্ষিণাংশের যোগাযোগব্যবস্থা। স্থলপথে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর টহল সীমিত হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু খাদ্য ও জ্বালানি সংকট দুই পক্ষকে ভোগাচ্ছে। টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মংডু শহর থেকে উত্তর দিকে তুমব্রু পর্যন্ত (বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্তের বিপরীতে) অন্তত ৪৭ কিলোমিটারের আরাকান সড়কে ছোট-বড় ১২টি সেতু রয়েছে। গভীর রাতে আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা মর্টার শেলের আঘাতে ইতোমধ্যে সাতটির বেশি সেতু ভেঙে পড়েছে, সড়কের বিভিন্ন অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে মংডু শহরের সঙ্গে তুমব্রু পর্যন্ত সড়কটিতে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি বাহিনীর টহল ও সাঁজোয়া যানের চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে আরাকান আর্মি সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে দিয়েছে। এই সড়কের বলিবাজার, নাকপুরা, কুমিরখালী, পেরাংপুরুতে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপির সদর দফতর এবং বিজিপির পৃথক তিনটি সেক্টর রয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আরাকান আর্মি তুমব্রু রাইট ও লেফটে তিনটি বিজিপি চৌকি দখলে নেয়। ঢেঁকিবনিয়া বিজিপি সেক্টরেও হামলা চালায়। মংডুর দক্ষিণে রাচিডং ও বুচিডং এলাকার কয়েকটি চৌকি দখলের খবর রয়েছে। এখন দখল করা সীমান্তচৌকি পুনরুদ্ধার এবং আরাকান আর্মিকে পরাজিত করতে রাত-দিন আকাশ থেকে শক্তিশালী বোমা ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে সরকারি বাহিনী। তাতে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। মংডুর দক্ষিণে রাচিডং-বুচিডং শহর হয়ে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিথুয়ের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ থাকায় মংডু টাউনশিপে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাফেজ এনামুল হাসান জানান, ওপারের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপারের টেকনাফ পৌরশহর, দমদমিয়া, জাদিমুরা, হ্নীলা, উনচিপ্রাং, হোয়াইক্যং এলাকায় ভূকম্পন দেখা দিচ্ছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। ওপারের সংঘাতের দ্রুত নিরসন না হলে আসন্ন রোজার মাসে টেকনাফবাসীর দুঃখ-দুর্দশা বেড়ে যাবে।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ওপারের গোলাগুলির আতঙ্কে তার ইউনিয়নের অন্তত ৮ হাজার মানুষ নাফ নদীর তীরের লবণ মাঠ, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের জমিতে যেতে পারছেন না। গ্রামগুলো মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে ওপারের গুলি ঘরবাড়িতে আঘাত হানতে পারে।

তবে গত ছয় দিন ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত স্বাভাবিক রয়েছে।

সর্বশেষ খবর