বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্থায়ী হলো দ্রুত বিচার আইন

নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের তীব্র বিরোধিতার মুখে দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করার বিল পাস হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন, ২০২৪ নামে বিলটি সংসদে কণ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিলটি পাসের জন্য প্রস্তাব করেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদে উপস্থাপন করা হয়। বিলটি পাসের আগে বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনায় অংশ নিয়ে একে কালো আইন হিসেবে অভিহিত করেন। এ আইন স্থায়ী করা হলে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন তাদের বিরুদ্ধেও তা ব্যবহার হতে পারে বলে বিরোধী দলের সদস্যরা মন্তব্য করেন।

তবে এ আইনের উদ্দেশ্য ভালো জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এমন ধরনের কোনো কাজ করেনি যে ক্ষমতায় না থাকলে তাদের ওপর এই আইন প্রয়োগ হবে।

বিলটির বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আইনটি ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের সময় যখন করা হয় তখন আপনারা বলেছিলেন এটা নিবর্তনমূলক আইন, কালো আইন। এই আইনটি রাজনৈতিক কারণে বা যে কোনো কারণে সরকার ইচ্ছা করলে যে কোনো নাগরিককে হয়রানি করতে পারে। সেই আইনটা আপনারা রেখেছেন, আমি জানি না কেন রেখেছেন। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, যদি প্রয়োজন পড়ে আরও এক বছর দুই বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ান। দয়া করে আইনটিকে স্থায়ী করবেন না। তাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের ওপর এমন অবস্থা হবে তখন আফসোস করবেন। জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে পড়তে হয়। বিএনপি গর্ত খুঁড়েছিল গর্তে পড়তে হয়েছে। আজ আপনারা স্থায়ী করছেন, সময় তো সব সময় এক রকম যায় না। স্থায়ী না করে আইনটির মেয়াদ ৪ বা ৫ বছর বাড়াতে পারেন। জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য মাসুদউদ্দিন চৌধুরী বলেন, যখন ২০০২ সালে আইনটি হয়েছিল, তখন সবাই বিরোধিতা করেছি। এই ২২ বছরে মানুষের অবস্থা কী হয়েছে সেটা জনমত যাচাই করে দেখতে পারেন। যেহেতু সময় শেষ তাই চার বছর বাড়াতে পারেন।

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ২০০২ সালে এই আইনটি হয়েছে। সেই সময় পরিস্থিতি যেটা ছিল একটা অরাজক পরিস্থিতি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। যেখানে সেখানে নানা ধরনের ক্রাইম সংঘটিত হতো। সেই জন্যই হয়তো তখনকার সরকার এটা করেছিল। আমি মনে করি, এই আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিল যাতে তাৎক্ষণিক বিচার পায়। অল্প সময়ের মধ্যে যারা অপরাধ করে তাদের যেন বিচার হয়, তারা যেন শাস্তি পায় উদ্দেশ্যই এটা ছিল। তিনি বলেন, আমাদের সংসদ সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান এই আইনটির মাধ্যমে যেন বিচার হয়। শুধু সংসদ সদস্য না অনেকে প্রায়ই এই আইনটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান। ওই একটাই যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধিরা শাস্তি পায়। আইনটির উদ্দেশ্যটা ছিল সেটাই। সংসদ সদস্যার কিন্তু কেউ বলেননি এই আইনটি বাতিল করে দেন। কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়, শুধু বলেছেন সময় বাড়িয়ে দিয়ে আইনটি চালু থাকুক। সবাই বিরোধিতা করছেন আইনটা যেন স্থায়ী না হয়। স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই আইনটি একই রকম আছে, কোনো সংশোধন করিনি। গত ২২ বছর ক্রমাগত এই আইনটি বাড়িয়ে গেছি। দুই বছর, কোনো কোনো সময় আরও বেশি। কাউকে উদ্দেশ্য করে বা কাউকে ক্ষতি করার জন্য এই আইন হয়নি। এ পর্যন্ত এই আইন যা বাস্তবায়ন হয়েছে কেউ বলতে পারবে না যে, কোনো রাজনৈতিক নেতাকে এই আইনের আওতায় এনে বিচার কাজ করা হয়েছে এবং তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরকম কিছু কিন্তু ঘটেনি। আমি মনে করি সংসদ সদস্য যারা আপত্তি করেছেন সবার জন্যই মঙ্গল হবে যদি আমরা একবারে বাড়িয়ে স্থায়ী আইন করে নিই। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই এটার কোনো অপপ্রয়োগ হবে না। এটা ভালো আইন, তাদের মেনে নিতে আমি অনুরোধ রাখব।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মুজিবুল হক চুন্নু সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে স্ববিরোধিতা আছে। তিনি বলেছেন, আইনটি ভালো আইন। বিএনপির সময় যখন আইনটি করা হয় তখন আপনারা চরম বিরোধিতা করেছিলেন কেন? এখন ভালো হয়ে গেল। আর বলছেন অপপ্রয়োগ হয় না, অপপ্রয়োগ হয় কি না যারা আন্দোলন করছে আজকে তারা বলতে পারবে। আমরা যদি ভবিষ্যতে কোনো সময় আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাই, তখনই বুঝব অপপ্রয়োগ হচ্ছে কি না, হবে কি না।

সর্বশেষ খবর