বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

জুয়ার টাকা নিয়ে সংঘর্ষে আগুন লুট, আহত ৩০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল জুয়ার টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রভাবশালী দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বিরাসার গ্রামে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দাঙ্গাবাজরা বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। জানা যায়, কয়েকদিন আগে জুয়া খেলার টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বিরাসার গ্রামের প্রভাবশালী বাবুল মিয়ার বড় গোষ্ঠীর আলামিন একই গ্রামের কাউন্সিলর মিজান আনসারির বাড়ির মহিদ মিয়া ও তার ছেলেকে মারধর করে। এ নিয়ে সোমবার উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন আহত হয়। এরই জেরে গতকাল সকাল থেকে উভয় গোষ্ঠীর লোকজন ক্রিকেট খেলার হেমলেট পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র এবং একাধিক বিদেশি পিস্তল নিয়ে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

হাতবোমার বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ নারকীয় তাণ্ডবের পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

গ্রামের কয়েকটি পয়েন্টে খণ্ড খণ্ড সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, সদর থানা পুলিশ, অতিরিক্ত পুলিশ গিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়নি। সংঘর্ষের সময় দাঙ্গাবাজরা পেট্রোল বোমাও ব্যবহার করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে বড় গোষ্ঠীর বাবুল মিয়ার প্রাসাদোপম বাড়িসহ তার ভাইয়ের বাড়ি, হানিফ মিয়া, জারু মিয়া, ফিরোজ মিয়া, ফারুক মিয়া, সেলিম মিয়ার বাড়িসহ ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। বাবুল মিয়ার বাড়িতে থাকা তার বৃদ্ধ বাবা আবদুল মন্নর আলী (৮০) ও মা আবেদা খাতুন (৭৫) জানান, মারামারি শুরু হলে আমাদের সামনেই একদল লোক দা-বল্লম নিয়ে বাড়িতে ঢুকে সারা বাড়ি ভাঙচুর, তছনছ করেছে। সংঘর্ষের সময় দাঙ্গাবাজরা সাহেব বাড়ির মুহিদ মিয়া, ছেনু মিয়া, হারিস মিয়ার বাড়িসহ ৫-৬টি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় ব্যাপক লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মুখছেনা বেগম ও বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ মলাই মিয়া (৭৮) বলেন, বাড়িঘরের সব মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। পুরুষরা আগুন দিছে আর মহিলারা ফ্রিজ, চালের ড্রাম, পানির মোটরসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে গেছে। সংঘর্ষে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সোহেল, কনস্টেবল মামুন, সাইফুলসহ উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে আহতরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। এ সময় জসীম (৩৫) নামে এক যুবকের কাছ থেকে ৫ রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তার উদ্ধারসহ বেশ কিছু হাতবোমার খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গ্রামের একাধিক গোষ্ঠীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিদেশি পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধারসহ তিনজনকে আটক করেছে। পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর