শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
উপজেলা নির্বাচন

ইসিতে অভিযোগের স্তূপ

গোলাম রাব্বানী

উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর নানা অভিযোগ আসছে নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশনের টেবিলে টেবিলে অভিযোগের স্তূপ জমেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবের কাছে এসব অভিযোগ দিয়েছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও উপজেলায় প্রার্থিতা নিয়ে নানা আলাপ-আলোচনা চলছে। দেখা দিয়েছে দলীয় কোন্দল। একজন প্রার্থী অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনে। আবার দলীয় নেতাদের কাছেও একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করবে রোজার মধ্যেই। সেই সময়ে কমিশন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ঢাকা অফিস, জেলা, উপজেলা অফিসে অভিযোগ আসছে। তবে তফসিল ঘোষণা না হলে সেই বিষয়গুলো আমলে নিতে পারছে না ইসি। বিভিন্ন উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীরা ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। আবার বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বললেও নেতা-কর্মীরা নির্বাচনি মাঠে অনেক প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া কাল বিভিন্ন নির্বাচন রয়েছে তা নিয়েও ইসির কাছে অভিযোগ এসেছে।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার উপনির্বাচনে একজন প্রার্থী সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া কর্মী-সমর্থকদের ভয়-ভীতি দেখানোসহ নির্বাচনের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নির্বাচনের দিন সিসিক্যামেরা স্থাপনের দাবিও জানিয়েছেন একজন প্রার্থী। যদিও ইসি জানিয়ে দিয়েছে এবারের নির্বাচনে সিসিক্যামেরা স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে উপজেলাসহ অন্যান্য নির্বাচনে পোস্টার নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন একজন সম্ভাব্য প্রার্থী। নূরুল কাদের সোহেল নামের একজন গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আমি পোস্টার নিষিদ্ধ করার দাবি করছি। বিগত একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এ দাবি তুলেছেন বলে জানান এ সম্ভাব প্রার্থী।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা নিয়ে দোটানায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কোন ধাপে কোন উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এ নির্বাচনে অধিকাংশ উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। আবার অনেক প্রার্থী ইসির কাছে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন। আবার অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবিও জানিয়েছেন। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তফসিল ঘোষণার সময় কোন উপজেলায় ইভিএম এবং কোন উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ হবে সেই তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। তবে যেখানেই ব্যালটে ভোট হবে, সেই উপজেলার ভোট কেন্দ্রে সকালে যাবে ব্যালট পেপার। আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল রোজার মধ্যেই ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যার প্রথমটি হবে আগামী ৪ মে। এরপর ১১ মে দ্বিতীয়, ১৮ মে তৃতীয় ও ২৫ মে চতুর্থ ধাপে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। রোজার পরই এ নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, ইসির হাতে এখন দেড় লাখ ইভিএম আছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম অকেজো। সদ্যসমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬০-৭০ আসনে ব্যবহারের জন্য ইভিএমগুলো প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেনি ইসি। একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসির প্রাথমিক চিন্তায় রয়েছে একই জেলায় ইভিএম এবং ব্যালটে ভোট না করার বিষয়টি। যে জেলায় যে ধাপে ইভিএম হবে, সেই জেলায় সব উপজেলায় ইভিএম। আবার যে জেলায় যে ধাপে ব্যালটে ভোট হবে এ ক্ষেত্রে ওই ধাপে ওই জেলার সব উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোট হবে। এ জন্য সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হবে। এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের বিস্তারিত সূচি রোজার মধ্যে ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কমিশন চার ধাপে উপজেলা নির্বাচনের তালিকা প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের তফসিল দিতে ৪০ থেকে ৪২ দিন সময় লাগে। এক্ষেত্রে রোজার মধ্যেই তফসিল ঘোষণা হবে। তা পরবর্তী কমিশন সভায় নির্ধারণ করা হবে। দেশে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। পাঁচ ধাপের ওই ভোট শেষ হয় গত জুনে। আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় প্রথম সভার দিন থেকে। পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব পালন করে। মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দলীয় প্রতীক : ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার তিন উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদ বাদে বাকি দুটি পদ উন্মুক্ত রাখে। এবার উপজেলায় নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর