শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
দুই সিটিতে ভোট কাল

কুমিল্লায় হতে পারে ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধ

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লায় হতে পারে ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ  আজ শুক্রবার। এ নির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে লড়াই হতে পারে ত্রিমুখী। সুষ্ঠু ভোটে তিনজনের যে কেউ পরবেন জয়ের মালা। এদিকে শেষ দিনের প্রচারণায় গতকাল ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থী। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন নগরীর অলিগলি। চলেছে কথার লড়াই। একে অন্যের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হামলার ঘটনাও ঘটেছে। সবকিছু ছাপিয়ে এবার চলছে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ। জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। কারণ চার প্রার্থীরই রয়েছে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচিতি। তারা হলেন- কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এমপি বাহারের মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা (বাস), বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু (প্রতীক-টেবিল ঘড়ি), স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া) এবং মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম (হাতি)। অবশ্য দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলেও সব প্রতিদ্বন্দ্বীই দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। এর মধ্যে একজনকেই মেয়র হিসেবে বেছে নেবেন নগরবাসী। তবে জয় না পেলেও অন্য তিন প্রার্থীও সম্মানজনক ভোট পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশঙ্কা নেই কারও জামানত বাজেয়াপ্তের।

সূচনার ভরসা : অপেক্ষাকৃত নবীন হলেও দলীয় রিজার্ভ ভোটে এগিয়ে যেতে পারেন বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা। কারণ তার বাবা কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের রয়েছে নির্ভরশীল কর্মিবাহিনী। মহানগর কমিটিও তাকে সমর্থন দিয়েছে। সূচনা বলেছেন, করোনাকালে জাগ্রত মানবিকতা সংগঠনের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। তাই তাদের সমর্থন তার পক্ষে রয়েছে। তাছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একচেটিয়া ভোটও বাস প্রতীকে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।

সাক্কুর সমর্থকরা আশাবাদী : দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত ২০২২ সালের সিটি নির্বাচনে প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের একটা অংশের সহানুভূতি রয়েছে তার প্রতি। দীর্ঘ দিন পৌর চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়র থাকায় দলের বাইরেও নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে সাক্কুর। যার প্রতিফলন দেখা গেছে বিগত নির্বাচনগুলোতেও। এর মধ্যে ২০১২ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। সর্বশেষ ২০২২ সালের নির্বাচনে মাত্র ৩৪৭ ভোটে হারেন। সাক্কুর সমর্থকরা আশা করেন, অতীতের চেয়ে এবারের প্রেক্ষাপট সাক্কুর অনুকূলে। কারণ এবার দলীয়ভাবে ভোট হচ্ছে না।

মনিরুল হক সাক্কু মনে করেন, বহিষ্কার হলেও তিনি বিএনপির আদর্শ বিচ্যুত হননি। তাই তার পক্ষে রয়েছেন নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা। তাছাড়াও সাধারণ ভোটাররাও তাকেই বেছে নেবেন। কারণ তিনি মেয়র থাকতে নগরীর ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।

কায়সারের পাশে বিএনপি : গত ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছিলেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও এবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির বেশির ভাগ শীর্ষ নেতাকে কাছে পেয়েছেন। তার ভগ্নিপতি আমিন উর-রশিদ ইয়াছিন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। সেই হিসেবে দলের নেতা-কর্মীরা তার পক্ষে মাঠে রয়েছেন। তাছাড়াও ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ছাত্র সংসদ নেতা হিসেবে ব্যক্তিগত কিছু অনুসারী রয়েছে কায়সারের। আর সরকারবিরোধী ভোটও তার পক্ষে যাবে বলে মনে করেন সমর্থকরা।

ভোট বাড়বে তানিমের : কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের এমপি বাহারের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম। ছিলেন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি। তবে বিভিন্ন কারণে দেড় দশক ধরে নেই বাহার বলয়ে। এ সময়ে নিজস্ব কিছু কর্মিবাহিনী গড়ে তুলেছেন। তরুণদের মাঝে রয়েছে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। এবার হাতি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন কুসিকের উপ-নির্বাচনে। ২০১২ সালে প্রথম নির্বাচনে সাক্কু ও আফজাল খানের

বিপক্ষে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তখন এককভাবে ভোট পেয়েছিলেন ৭ হাজারের বেশি। তাই এবার নানা সমীকরণ করছেন তার সমর্থকরা। তাদের মতে, মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বের বিরোধীদের আনুকূল্য পাবেন তিনি। সে হিসেবে এবার বেশি ভোট পাবেন তানিম।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৫ জুন কুসিকের তৃতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রিফাত ৫০ হাজার ৩১০ এবং সাক্কু পান ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত।

সর্বশেষ খবর