শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ

ক্ষতি কমানো যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে

নিজস্ব প্রতিবেদক

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ

দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম না হলে টেকসই উন্নয়ন হয় না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। পূর্বপ্রস্তুতির কারণে ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু ১০ লাখ থেকে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা গেছে। তবে দেশে এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে মানবসৃষ্ট দুর্যোগে। আর মানবসৃষ্ট দুর্যোগের পূর্বাভাসও দেওয়া যায় না। এটাকে কমাতে পারলে দেশে দুর্যোগের মাত্রা একধাপ কমে আসবে। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য ড্রোনসহ আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই স্মার্ট ও টেকসই সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স হলে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২৪ উপলক্ষে ‘দুর্যোগ প্রস্তুতিতে লড়বো, স্মার্ট সোনার বাংলা গড়বো’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো কামরুল হাসান এনডিসি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের পরিচালক ড. মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) যুগ্মসচিব মো. আবদুল্লাহ আল-মামুন, ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু কালভার্ট নির্মান প্রকল্পের পরিচালক শরিফুল ইসলাম, প্রকল্পটির উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন, এইচবিবি প্রকল্পের পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস, প্রকল্পটির উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. আওলাদ হোসেন, মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মুবিনুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশে প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রুহুল আমিন রাসেল। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে যুগ্মসচিব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক নাহিদ সুলতানা মল্লিক বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর সপ্তম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বাংলাদেশ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে চলেছে। ’৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ ও ’৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড় মোখায় মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম সতর্কবার্তা প্রচার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে স্থানীয়করণ, দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, মুজিব কেল্লা নির্মাণ, দুর্যোগে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও যোগাযোগের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, সারা দেশে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন, তাৎক্ষণিক ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করায় এখন ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা গেছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. কামরুল হাসান বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের নাম পৃথিবীর সব জায়গায় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। গবেষণায় এসেছে দুর্যোগ মোকাবিলায় ১ ডলার আগাম বিনিয়োগ করলে দুর্যোগ-পরবর্তীতে ১০ ডলার সেভ করা যায়। এখন আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক টেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছি। আমরা এখন ২৪ তলা উঁচু ভবন থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সক্ষম। আগাম প্রস্তুতি থাকলে আমরা দুর্যোগ-পরবর্তী ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারব। তবে সমস্যা এখন মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। এটার কোনো পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় সবাইকে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। ঘরে ঘরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। গৃহকর্মীকেও সেগুলোর ব্যবহার শিখিয়ে দিতে হবে। সবাইকে সচেতন করতে পারলেই দুর্যোগের সঠিক প্রস্তুতি নিতে পারব। ড. মনিরুজ্জামান বলেন, এখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনেক স্মার্ট। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমারা অনেকটা এগিয়ে থাকলেও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে অনেকটাই পিছিয়ে আছি। কারণ এই দুর্যোগে আমরা কোনো পূর্বাভাস পাই না। পাশাপাশি আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। আমাদের যেহেতু টেকনোলজি আছে, তাই এখন আমাদের কাজ হবে কমিউনিটিকে আরও বেশি উদ্ভুদ্ধ করা, সচেতন করা। মো. মিজানুর রহমান বলেন, দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্বের, যেটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী খুব ভালোভাবেই করছেন। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব সংস্থাকে আরও বেশি সমন্বয় করা প্রয়োজন, যেখানে দুর্যোগ অধিদফতর লিড রোল পালন করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে স্মার্ট করতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে হবে।  বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা কঠিন হলেও সরকারের পূর্ব প্রস্তুতির কারণে তা সহজ হবে। তবে আগে আমাদের অবস্থা এমন ছিল না। ’৭০ ও ’৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে উপকূলীয় এলাকায় ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠা করেন। এর অনেক দিন পরে তাঁরই কন্যা এসে বাংলাদেশের চেহারাটা অনেকটাই পরিবর্তন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা অনেক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। তবে উদ্বেগের বিষয় ২ কোটি মানুষের ঢাকা শহরে একটা বড় ভূমিকম্প হলে দৌড়ে পালাবার জায়গা থাকবে না। অন্য বক্তারা বলেন, নগর জীবনের দুর্যোগের ঝুঁকির ক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ না নিলে এই দুর্যোগের ফলে মৃত্যুর হার অন্যান্য দুর্যোগের থেকে বেড়ে যাবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে আনা হলে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় আরও বেশি শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য ড্রোন, ফায়ার প্রুফ ক্যামেরা ব্যবহার করা গেলে উদ্ধার কাজ অনেকটা সহজ হবে।

 

সর্বশেষ খবর