বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
দোকান মালিক সমিতি

২৯ পণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া অযৌক্তিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

কৃষি বিপণন অধিদফতরের বেঁধে দেওয়া ২৯টি পণ্যের মূল্য অসার, অর্থহীন ও কল্পনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সংগঠনটি বলেছে, প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ও বিবেচনা ছাড়াই সরকারি সংস্থাটি দাম নির্ধারণ করেছে। সে জন্য এই প্রজ্ঞাপন স্থগিতসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে তারা। গতকাল মগবাজারে দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে চরম অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা মূল্য বেড়েছে। অন্যদিকে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা আনুপাতিক হারে কমছে। এই দীর্ঘ দুর্যোগময় সময়ে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রেণির অনেকেই পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত। যারা টিকে আছেন তারাও অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে কৃষি বিপণন অধিদফতরের পণ্য মূল্য বেঁধে দেওয়া অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত। কৃষি বিপণন অধিদফতরের এ ধরনের কল্পনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে সরকার ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, কৃষি বিপণন অধিদফতর ও টিসিবির মূল্যতালিকা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে ভয়াবহ পণ্য সংকট তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন জেলা থেকে জানানো হয়েছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করার সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র শ্রেণির ব্যবসায়ীরা আবারও ব্যবসা পরিচালনা করতে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন। তিনি বলেন, কৃষি বিপণন অধিদফতর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুচরা পর্যায়ে ২৯টি পণ্য পবিত্র রমজান মাসে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি। দাবিগুলো হলো- প্রথমত, ২৯ পণ্যের মূল্যনির্ধারণ অবিবেচনা, অসার, অর্থহীন ও কল্পনাপ্রসূত। তাই এখনই প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করতে হবে। অন্যথায় ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে হবে। টিসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে পণ্য আমদানি করে বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। চতুর্থত, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। পঞ্চম দাবিটি হলো, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ষষ্ঠ, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংস্থার চাপমুক্ত অবস্থায় ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে এবং সর্বশেষ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ওপর আরোপিত সব প্রকার ট্যাক্স-ভ্যাট কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে আনতে হবে। দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি কেন কল্পনাপ্রসূত- জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার সুযোগ নেই, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হবে। কারও সঙ্গে আলোচনা না করে এভাবে দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে বাজারে পণ্যের সংকট হচ্ছে; অভিযান হচ্ছে খুচরা দোকানে। উৎপাদক পর্যায়ে তদারকি না বাড়িয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান জানান দোকান মালিক সমিতির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া, বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতাসহ ঢাকার বাজারের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর