শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
অপহরণ জিম্মি দেশবিদেশে

লিবিয়ায় দালালের হাতে জিম্মি চার বাংলাদেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই নিয়ে চার যুবককে লিবিয়ায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্র তাদের নিয়ে যায় দুবাই। তারপর বিক্রি করে দেওয়া হয় সেখানকার দালাল চক্রের কাছে। একাধিক দালাল চক্রের হাত বদল হয়ে অবৈধভাবে মিসর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়।

সেখানে তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে। ২৫ মার্চ স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। গত বুধবার ইফতারের সময় বন্দিদশা থেকে পালিয়ে যান চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাচা মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে ওয়াসিম (২২)। পরে তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। অন্য বন্দিরা হলেন- মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন (১৯), আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম (১৯) ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন (২০)। স্বজনরা জানান, দুই মাস আগে লিবিয়ার হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশে চারজন জনপ্রতি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা করে ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা জহিরুল ইসলামকে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় এই যুবকরা। জহিরুল তাদের প্রথমে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই নিয়ে যান। সেখানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার মিজানুর নামে এক লোকের হাতে তাদের তুলে দেন। মিজানুর রহমান তিন দিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। সাত দিন পর দুবাই থেকে মিসর হয়ে লিবিয়া নিয়ে আরেক দালালের হাতে বিক্রি করে দেয় তাদের। লিবিয়ায় তাদের কিছুদিন কাজ দেওয়ার পর গত ২৫ মার্চ বন্দি করে রাখা হয়। পরের দিন ২৬ মার্চ পরিবার ও স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিওবার্তা পাঠায় দালাল চক্র। নাঈমের বড় ভাইয়ের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন জানান, ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে। বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বরও দেয় তারা। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে তাদের। এজন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। বুধবার বিকাল ৩টার মধ্যে যত পারা যায়, তত টাকা দিতেও বলা হয়। টাকা না দিলে একজন-একজন করে লাশ পাঠাবে বলে জানায় দালাল চক্র। কিন্তু বুধবার টাকা না পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও ফোন দেওয়া শুরু করে। ‘টাকা পাঠাতে পারব না- তাদের ফোন ধরে কী করব’-বলেন স্বজনরা। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, জহিরুল ইসলাম ইতালি ছিল। সেখান থেকে এক নারীকে বিয়ে করে কিছুদিন ঢাকায় ছিল। এরপর আবার লিবিয়া চলে যায়। গ্রামের বাড়িতে তেমন আসে না। প্রথমবারের মতো নিজ এলাকা থেকে কাউকে চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে জহিরুল ইসলাম দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও যুবকদের চাকরির প্রলোভনে বিদেশে পাচার করেছে। এদিকে চার যুবককে বন্দি করে মুক্তিপণ দাবি করার খবর পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে মূল দালাল চক্রের হোতা জহিরুল ইসলামের পরিবার। তার দ্বিতীয় স্ত্রী কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক এলাকায় ভাড়া বাসায় ছিল। সেখান থেকেও পালিয়ে গেছে বলে         জানান এলাকাবাসী।

সর্বশেষ খবর