রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাংলাদেশি তরুণকে হত্যা

পুলিশের শাস্তি দাবিতে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

মা এবং ছোট ভাইয়ের সামনে নিজ বাসায় উইন রোজারিওকে (১৯) গুলি করে হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠছেন প্রবাসীরা। শুক্রবার বিকালে জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় ‘প্রবাসী বেঙ্গলি খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে র‌্যালি বের করা হয়। সেখানে জড়ো হয়েছিলেন হিন্দু, বৌদ্ধ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বস্তরে প্রতিনিধিত্বকারীরা। ছিলেন পেশাজীবী এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীরাও। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রচ ক্ষোভ দেখায় এই র‌্যালি থেকে। এ সময় তারা ঘটনার ৬০ ঘণ্টা পরও পুলিশের বডি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ এবং অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

২৭ মার্চ নিউইয়র্ক সিটির ওজোনপার্কে পুলিশের গুলিতে খুন হন উইন রোজারিও। এ ধরনের নৃশংসতার পরপরই সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট কিংবা সিটি মেয়রের উদ্যোগে পুলিশের বডি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণের পর ক্ষুব্ধ জনগণকে শান্ত করতে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশি আমেরিকান উইনের ক্ষেত্রে তা না ঘটায় সর্বস্তরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

র‌্যালিতে উপস্থিত হয়ে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, উইন রোজারিওর পরিবার এ হত্যাকান্ডের দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানোর জন্য তার সহযোগী ফার্মকে নিযুক্ত করেছেন। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বডি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। আনুষঙ্গিক সবকিছু তাদের ফার্মের বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখবেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী এ সংবাদদাতাকে আরও জানান, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী উইন রোজারিওর হত্যাকান্ডের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছেন স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল। পাশাপাশি আমাদের ফার্মও তদন্তে নেমেছে। ন্যায়বিচারের জন্য আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে লড়ে যাব।

১৯৯৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আমাদু দিয়ালো নামক ২৩ বছর বয়সী গিনির এক ছাত্রকে ব্রঙ্কসে নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছিল। সেই হত্যাকান্ডে কৃষ্ণাঙ্গ দিয়ালোর পরিবার ভাড়া করেছিল অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর সহযোগী এই ল’ ফার্মকে। সে মামলায় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নিহত দিয়ালোর পরিবারকে ৩ মিলিয়ন ডলার দিয়ে মামলাটির নিষ্পত্তি করে।

বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী বেঙ্গলি খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি গ্যাব্রিয়েল তাপস গমেজ, বিকাশ গমেজ, লুথারেন চার্চের প্যাস্টর জ্যামস রয়, দক্ষিণ এশিয়ান-আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত ‘স্যাফেস্ট’র প্রধান নির্বাহী মাজেদা এ উদ্দিন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট এ এফএম মেসবাহউজ্জামান প্রমুখ।

মাজেদা উদ্দিন বলেন, একই এলাকায় ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মোদাসসের খন্দকার (৩৬) নামক এক বাংলাদেশিকে নিজ বাসার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তি এখনো শনাক্ত হয়নি, দেড় বছর আগে বস্টনে আরেক বাংলাদেশি ছাত্রকে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। সেই হত্যাকান্ডেরও বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। এভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের মতো ব্রাউন কালারের বাঙালিরাও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশি বর্বরতার ভিকটিম হচ্ছে।

১৯ বছর বয়েসী বাংলাদেশি আমেরিকান উইন রোজারিওর ছবিসহ প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। প্রত্যেকে ছিলেন সরব। একই দাবিতে ১ এপ্রিল একই স্থানে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে গাজীপুর জেলা অ্যাসোসিয়েশন। এ সংগঠনের সেক্রেটারি ইছহাক মোল্লা বাবু এ সংবাদদাতাকে জানান, নিহত উইনের বাড়ি হচ্ছে গাজীপুর জেলার পূবাইলের হারবাইদ গ্রামে। উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও এবং মা ইভা কোস্টা ছেলেকে এভাবে হারানোর বেদনায় কাতর।

এদিকে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে যে, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর