রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি

♦ পাওনা টাকা চাওয়ায় বন্ধুকে গুলি করে হত্যা ♦ ছুরিকাঘাত করে কৃষক ও মিস্ত্রিকে হত্যা ♦ মাদক সেবনের টাকা না দেওয়ায় বাবাকে খুন ♦ জমি নিয়ে বিরোধে স্কুলশিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা

প্রতিদিন ডেস্ক

তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি

সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি বেড়ে গেছে। এসব কারণে গত ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন স্থানে অনন্ত ছয়জনকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

টেকনাফ : কক্সবাজারের টেকনাফে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে বন্ধুর গুলিতে মো. জোবাইর (২৪) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ায় নিজ বসতঘরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জোবাইর একই এলাকার মৃত আবদুুল খালেক প্রকাশ হরিংগার ছেলে।

স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফুটবল খেলোয়াড় ও দোকানদার মো. জোবাইরের একটি ছোট দোকান রয়েছে। একই এলাকার বাসিন্দা বন্ধু ও ফুটবল খেলোয়াড় নজিবুল্লাহর কাছ থেকে ৮০০ টাকা বাকি পাওনা চাওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় নজিবুল্লাহ ও তার ভাইসহ কয়েকজন মিলে জোবাইরের বসতঘরের সামনে এসে গুলি চালায়। তখন জোবাইরের মাথায় গুলি লাগে এবং তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গুলিবিদ্ধ জোবাইরকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় কৃষি জমির পত্তনের পাওনা ১ হাজার টাকা দিতে না পারায় মুসা মিয়া (৩৪) নামে এক কৃষককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে জমির মালিকের ছেলে রুহুল আমিন। গতকাল সকাল ১১টার দিকে উপজেলার কুটি ইউনিয়নের দক্ষিণখাঁর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুসা মিয়া দক্ষিণখাঁর গ্রামের মৃত জজু মিয়ার ছেলে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ওই প্রান্তিক কৃষকের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। হত্যাকারী রুহুল আমিন একই গ্রামের মৃত তৌহিদ মিয়া ছেলে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত রুহুল আমিন।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ বছর ধরে দরিদ্র পরিবারের সন্তান প্রান্তিক কৃষক মুসা মিয়া একই গ্রামের তৌহিদ মিয়ার জমি পত্তন নিয়ে চাষাবাদ করে আসছিলেন। প্রতি বছরই জমি পত্তনের টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করে আসছিলেন। এ বছর পত্তনের ৩ হাজার টাকার মধ্যে ২ হাজার টাকা কিছুদিন আগে পরিশোধ করেছিলেন মুসা মিয়া। অবশিষ্ট পাওনা ছিল ১ হাজার টাকা। ওই ১ হাজার টাকা গতকাল পরিশোধ করার কথা ছিল। এদিন সকালে ঘটনার সময় রুহুল আমিনদের কাছ থেকে পত্তন নেওয়া জমিতেই কাজ করছিলেন মুসা মিয়া। সকালে টাকা আনতে গিয়ে বাড়িতে না পেয়ে জমিতে যান রুহুল আমিন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে রুহুল আমিনের সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে কৃষক মুসা মিয়াকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় মুসা মিয়ার চিৎকারে স্থানীয়রা ও বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ছাড়া সরাইলে পাওনা টাকার ঘটনায় উপর্র্যুপরি ছুরিকাঘাতে লাল খাঁ (২৫) নামে এক মোটরসাইকেল মিস্ত্রিকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত জসিম উদ্দিন (৩৭) ও আল-আমিন (৩৫) নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে সরাইল থানার পুলিশ।

গত রাত ১১টায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড্ডাপাড়া কুমারপাড়া সংলগ্ন সড়কে এ ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত লাল খাঁকে উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত লাল খাঁ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিহাতা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি পেশায় ছিলেন মোটরসাইকেল মিস্ত্রি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে লাল খাঁকে ছুরিকাঘাত করে দুজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন জসিম উদ্দিন নামে একজনকে ছুরিসহ আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তবে পালিয়ে যায় হত্যাকাণ্ডের আরেক মূল হোতা আল-আমিন। পরবর্তীতে পুলিশ আটক জসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাৎক্ষণিক পুলিশের একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মূল হোতা আল-আমিনকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতাররা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নরসিংসার গ্রামের মৃত নূর মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন ও জেলার বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের মৃত শফিক মিয়ার ছেলে আল আমিন।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে পূর্বশত্রুতার জের ধরে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সন্ধ্যার পর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি ইউনিয়নের কুট্টাগড় গ্রামে। নিহত শরীফ (৩০) সদর উপজেলার আউলিয়াপাড়া গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আউলিয়াপাড়া গ্রামের শরীফ ও কুট্টাগড় গ্রামের হেলিম মিয়ার ছেলে শাহীনের (১৮) মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জের ধরে কুট্টাগড় এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যার পর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শরীফকে ছুরিকাঘাত করে শাহীন পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত শরীফকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

ময়মনসিংহ : মাদকসেবনের টাকা না পেয়ে প্যান্টের বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে বাবাকে হত্য করেছে ছেলে মো. ফয়সাল (২৬)। গতকাল সকালে ময়মনসিংহ নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চর কালীবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম জুলহাস উদ্দিন (৪৫)। তিনি পেশায় বিদ্যুৎ মিস্ত্রি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, নগরীর চরকালীবাড়ি এলাকার জুলহাস উদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল নিয়মিত মাদকসেবন করত। এদিন সকালে মাদকাসক্ত ফয়সাল তার মায়ের কাছে ১০ হাজার টাকা চাইলে জুলহাস উদ্দিন টাকা দিতে বারণ করেন। এ সময় ফয়সাল ক্ষিপ্ত হয়ে প্যান্টের বেল্ট খুলে তার বাবাকে আঘাত করতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই জুলহাস উদ্দিন মারা যান।

খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে বাদী হয়ে ফয়সালকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত ফয়সালকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

নাটোর : জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় চাচাতো ভাইয়ের কোদালের আঘাতে জিল্লুর রহমান (৪৮) নামে এক স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহাদ আলী (৫৫) নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল সকালের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জিল্লুর রহমানের মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার দুপুরের দিকে উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে জমিসংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে জিল্লুর রহমান মাথায় প্রতিপক্ষের কোদালের আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হন। এ অবস্থায় তাকে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রামেকে স্থানান্তর করা হয়। আর অন্যদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত জিল্লুর রহমান উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মৃত মোজাহার আলীর ছেলে। তিনি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার থল ওলমা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (মৌলভি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অপর আহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। আটক আহাদ আলী একই গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনোয়ারুজ্জামান জানান, নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই খোরশেদ হোসেন বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন। এ ছাড়া একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর