প্রাথমিকের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর মাধ্যমিকের ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী শরণাপন্ন হয়েছেন প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে। এ ছাড়া ১৭ শতাংশ কোচিং সেন্টারের সহায়তা নিচ্ছে। শিক্ষায় নোট বা গাইডবই ব্যবহার বন্ধ করার কথা থাকলেও বাস্তবে প্রাথমিকের ৯২ দশমিক ৪ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৯৩ দশমিক ৯ শতাংশ গাইডবই ব্যবহার করছে।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের বিদ্যালয় শিক্ষা : মহামারি উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক ‘এডুকেশন ওয়াচ স্টাডি ২০২৩’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সঞ্চালনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক সচিব রাশেদা কে. চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এডুকেশন ওয়াচের ফোকাল পয়েন্ট ড. মোস্তাফিজুর রহমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় প্রাথমিকের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিকের ৭৬ শতাংশ ঝরে পড়ছে দারিদ্র্যের কারণে। আর প্রায় ৪ শতাংশ ঝরে পড়া শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। মাধ্যমিকে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের তিন-চতুর্থাংশই প্রাইভেট টিউটরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ১৭ শতাংশ কোচিং সেন্টারের সহায়তা নিচ্ছে। প্রায় ৫৩ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পিতা-মাতা বা পরিবারের অন্য কারও সহায়তা নিচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মহামারির পর সন্তানের পড়াশোনার জন্য শিক্ষা ব্যয়ও বেড়েছে অভিভাবকদের। ২০২২ সালে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা, আর শহরে ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার টাকারও বেশি। ২০২৩ সালে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে আরও ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২২ সালে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। সিটি করপোরেশন এলাকায় এই ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা পর্যন্ত। প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারি করোনাভাইরাসের পর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিক্ষার ওপর। ওই সময়ে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লেও তথ্য বলছে- প্রাথমিকের ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখার কাজে এই ডিভাইস ব্যবহার করছে না। কার্যত প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে মাত্র ৪১ দশমিক ১ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে মাত্র ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সারা দেশের ৮ বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্য থেকে ২৬টি উপজেলা ও পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।