রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে লোকসভা নির্বাচন

ভোটারদের মন পেতে যত কাণ্ড

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভোটারদের মন পেতে যত কাণ্ড

ভোট বড় বালাই! ভোটারদের মন পেতে কত কিছুই না করতে হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের। সামনেই ভারতের লোকসভা নির্বাচন। ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, যে যার মতো নির্বাচনি প্রচারণাতেও বেরিয়ে পড়েছেন। আর প্রচারণায় বেরিয়েই অভিনব পন্থা অবলম্বন করছেন। মূল উদ্দেশ্য ভোটারদের কাছে টানা, তাদের মন জয় করা।

শুক্রবার একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে ভোট প্রচারে বের হন পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব)। প্রথমে ঘাটাল, পরে দাসপুরে ভোট প্রচার শেষে দাসপুরের নিমতলা গোপাল গোবিন্দ জীউর রাস মন্দিরে দুপুরে হাজির হন দেব। এদিন প্রচার শেষে মন্দিরে সাধারণ মানুষজনদের সঙ্গে মেঝেতে বসেই দুপুরের খাবার খান তৃণমূল প্রার্থী। দেবের দুপুরের খাবারে মেনু ছিল লেবু, আলুভাজা, বেগুনি, পোস্তুবোড়া, ফ্রায়েড রাইস, বাটার পনির, ভাত, ডাল, আলুপোস্ত, চাটনি, পাঁপড়, পায়েস, রাজভোগ। খাবার শেষে মন্দিরে ভক্তদের সঙ্গে সেলফি তুললেন। দেবকে খেতে দিতে পেরে খুবই খুশি মন্দিরের নারী ভক্তরা। দেবকে খাইয়ে আনন্দে আত্মহারা নারী রাঁধুনিও। এই কেন্দ্রে দেবের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা হিরণ চ্যাটার্জিকে দেখা দিল আবার অন্য মুডে। নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার পর দাসপুরে নতুন বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন হিরণ। ফলে রান্নার বাজার করতে সবজি বাজারে থলে হাতে নিজেই হাজির। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ দাসপুর থানার অন্তর্গত নবীন মানুয়া হাটে সবজি কিনতে ব্যাগ হতে নিজেই বেরিয়ে পড়েছেন সবজি বাজারে। এই সবজি বাজার খুবই জনপ্রিয় এবং বড়। ফলে বাজারে ঢুকতেই হিরোকে দেখে ঘিরে ধরল সেলফি প্রেমীরা। বাজারে কেনাকাটা ফেলে মহিলারাও তাকে ঘিরে সেলফি তোলা শুরু করলেন। কাউকে অবশ্য নিরাশ করেননি হীরণও। পরে অভিনেতা জানান ‘দাসপুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। রান্নার জন্য আমার যে ব্যক্তি বাজার করে দেন, তিনি অসুস্থ। তাই নিজেই বাজার করতে বেরিয়ে পড়েছিলাম।’ তার কটাক্ষ ‘আমার তো আর ফ্রিজ কেনার মতো এত টাকা নেই এখানে। আমি এত কালো টাকার মালিক নই। তাই নিজের রান্নার জন্য নিজেই সবজি কিনতে বেরিয়েছিলাম।

বাঁকুড়ার সোনামুখীতে হরিনাম সংকীর্তনে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রচারণা সারলেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। সঙ্গে ছিলেন সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামীসহ দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। এদিন নিত্যানন্দপুরের মিনি মার্কেটে একটি হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানে উপস্থিত হয়ে কাসর বাজিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ এবং ভোট প্রচার করে নেন বিজেপি প্রার্থী। কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গেও। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কোতুলপুরের স্থানীয় একটি ক্লাবে বসন্ত উৎসবে যোগ দিয়ে অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ করেই কোতুলপুর সবজি বাজারে ভোট প্রচার ও জনসংযোগ সারলেন বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। পরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চপ-মুড়ি খান সৌমিত্র। তবে প্রাক্তন স্বামীকে টেক্কা দিয়ে প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন তার সাবেক স্ত্রী ওই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। গত ১৬ মার্চ কোতুলপুরে ভোট প্রচারে গিয়ে সেলুনে ঢুকে এক যুবকের চুল কেটে দেন তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা।

শনিবার সকালে পূর্ব বর্ধমান জেলার লোকো চার তলা কলোনিতে ব্লিচ মাঠে প্রাতঃভ্রমণ করে প্রচার শুরু করেন বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। ব্যাট হাতে মাঠেই ক্রিকেট খেললেন তিনি। খেলতে খেলতেই চলল জনসংযোগ। এরপর পাশের রেল পার্কের অপরিচ্ছন্নতা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। রেল কলোনির আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একজন স্থানীয় বাসিন্দাকে গান গাওয়ার অনুরোধ জানালেন দিলীপ ঘোষ। পরে তার গান শুনে সংবর্ধিত করেন বিজেপি প্রার্থী।

এদিকে প্রচারণার ফাঁকেই শুক্রবার মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা মির্জাপুর দক্ষিণপাড়া মসজিদে জুমার নামাজ পড়লেন বহরমপুর লোকসভা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। ইউসুফের উপস্থিতির বিষয়টি জানতে পেরেই মসজিদ চত্বরে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ।

সন্ধ্যায় ভরতপুরে ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করে ইফতার সারেন ইউসুফ পাঠান। এদিনের ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। প্রার্থী ছাড়াও এই ইফতার পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ও কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারসহ তৃণমূল কর্মী, সমর্থক ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

ক্রিকেটার বলে কথা! প্রচারণায় বেরিয়ে ক্রিকেট খেলবেন না তা কি হয়? তাই দলীয় কর্মীদের আবদার মেটাতে ভোট প্রচারের ফাঁকেই ক্রিকেট খেলতে দেখা গেল ইউসুফ পাঠানকে। উৎসাহী ক্রিকেটাররা সেই খেলা ড্রোন দিয়ে তুলে রাখল। গত বৃহস্পতিবার নওদা থানার আমতলা বয়েজ স্কুল মাঠে ক্ষুদেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেন ইউসুফ। বেশ কয়েকটি বল খেলে ৬-৪ মারেন ইউসুফ। স্থানীয় বাঘ-আছড়া মিলন সংঘের ক্রিকেটারদের সঙ্গে মাত্র দুই ওভার ক্রিকেট খেলেন। ইউসুফ পাঠানকে পেয়ে খুশি ক্লাবের বিভিন্ন ক্রিকেটারসহ এলাকার মানুষ।

হুগলি জেলার পান্ডুয়ায় তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী রচনা ব্যানার্জি নিজের প্রচার চলাকালীন হঠাৎ রাস্তা ধারে একটি ঘুগনি দোকানে প্রবেশ করে আনন্দের সঙ্গে নিজে ঘুগনি খেলেন, আবার দলীয় নেতা সমর্থকদেরও ঘুগনি খাওয়ান। তবে প্রচারে বেরিয়ে মানুষের জনসমর্থন যেমন পাচ্ছেন তেমনি বিভিন্ন অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তারকা প্রার্থীদের। এই যেমন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হীরণ চ্যাটার্জির ক্ষেত্রে। শনিবার হীরণকে কাছে পেয়ে এক সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ‘জয়লাভ করলে এলাকায় পরে দেখা যাবে তো?’ প্রশ্নটা কড়া হলেও রীতিমতো উপভোগ করে জবাব দিয়েছেন হীরণ। তার দাবি ‘দুবারের সাংসদ দেব জয় লাভের পরে এলাকায় আসেননি, তাই আমাকে এই প্রশ্ন ছোড়া হয়েছে আমি থাকতে পারব কি না। আমি বলেছি- নির্বাচনের শুরু থেকেই আমি দাসপুরে বাড়ি ভাড়া করে নিয়ে রয়েছি। হোটেল ভাড়া করিনি, যে রাতে থেকে সকালে বিল মিটিয়ে চলে যাব। প্রশ্নটা দেবকেই করা উচিত। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী ও বিজেপির হীরণ চ্যাটার্জি দুজনেই বহিরাগত। দুজনকেই অস্থায়ী ঠিকানা তৈরি করতে হয়েছে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারে থাকার জন্য। দেব প্রচারে এলে কখনো হোটেলে কখনো বিশেষ কারও বাড়িতে আশ্রয় নেন। হীরণ অবশ্য শুরুতেই দাসপুরে বাড়ি ভাড়া করে নিয়ে রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর