শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফেনীতে ট্রেনের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ৬

কুলাউড়ায় ইঞ্জিন বিকল, ছয় ঘণ্টা পর চলাচল স্বাভাবিক

ফেনী, কুমিল্লা ও শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

ফেনীতে ট্রেনের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ৬

ফেনীর মুহুরীগঞ্জ ব্রিজসংলগ্ন রেলক্রসিংয়ে গতকাল ট্রেনের সঙ্গে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ট্রাকের তিনজন এবং মোটরসাইকেলের তিনজন। এ ছাড়া একই দিন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে আন্তনগর উদয়ন ট্রেন আটকে পড়ে। তবে মেরামত শেষে ছয় ঘণ্টা পর ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যায়।

ফেনীর ছাগলনাইয়ার মুহুরীগঞ্জ ব্রিজসংলগ্ন এলাকার ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, ট্রেন চলাচলের সময় গেট বন্ধ না করার কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজনের নাম মো. মিজান (৩২)। তিনি উজিরপুরের কাউয়ারাহার আবুল হাওলাদারের ছেলে। অন্যজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। আর মোটরসাইকেলে থাকা নিহত তিনজন হলেন সাজ্জাদ, রিফাত ও দ্বীন মোহাম্মদ।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফেনী সদর উপজেলার পূর্ব ফাজিলপুর মুহুরীগঞ্জ ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ই/৩২(১) নম্বর রেলগেটে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গেটম্যান দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন না। এ চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেন অতিক্রম করার সময় গেটবেরিয়ার খোলা অবস্থায় ছিল। বালুবাহী ট্রাক রেললাইন পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। একই সময় ওই স্থানে মোটরসাইকেলে করে তিনজন রেললাইন পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তারাও ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন। পরে খবর পেয়ে রেললাইনের ওপর পড়ে থাকা দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও মৃতদেহগুলো সরিয়ে নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ফেনীর পুলিশ সুপার মো. জাকির হাসান বলেন, চৌদ্দগ্রামের তিনজনের নিহতের ঘটনা আমাদের জানা ছিল না। পরে ক্রসচেকে তাদের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত হয়েছি। চট্টগাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালেও একজনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ১১ বন্ধু ট্রেনে ভ্রমণ করছিল। তাদের তিন বন্ধু ট্রেনে থাকা অবস্থায় ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের লাশ বন্ধুরা সরাসরি বাড়িতে নিয়ে গেছে। তাদের দাফনও সম্পন্ন হয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে গেটম্যান মো. সাইফুল পলাতক রয়েছে।

তিন বন্ধুর পাশাপাশি দাফন : ফেনীতে বালুবাহী ট্রাকে চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেনের ধাক্কায় নিহত কুমিল্লার তিনজনের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি চলছে। নিহতরা ঈদ শপিং করতে যাচ্ছিলেন। নিহত তিনজনের বাড়িই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শাকতলা গ্রামে। তারা হলেন ইয়াছিনের ছেলে সাজ্জাদ (২০), রুহুল আমিনের ছেলে রিফাত (১৯) ও নুরুল ইসলামের ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ (১৯)। বিকালে শাকতলা আজিজিয়া হাফেজিয়া মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়েছে। তিন বন্ধুকে একই কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। উপজেলার চিওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বিকালে জানান. শাকতলা গ্রামের ১১ জন বন্ধু চট্টগ্রাম গিয়ে শপিং করার উদ্দেশ্যে সকালে পাশের উপজেলা নাঙ্গলকোট হাসানপুর গিয়ে ট্রেনে ওঠে। তিনজন ট্রেনের ইঞ্জিনের কাছে বসে আর বাকি আটজন ট্রেনের ভিতরে বসে। ফেনীর ফাজিলপুরে বালুবাহী ট্রাকে চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেনের ধাক্কায় ইঞ্জিনের কাছে বসা তিন বন্ধু নিহত হন। ভিতরে থাকার কারণে আটজন বেঁচে যান। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে এসে কুলাউড়া ও লংলা রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে কুলাউড়া স্টেশনের লোকোশেড থেকে নতুন সিরিজের একটি ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেনটিকে কুলাউড়া স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। ট্রেনটি ছয় ঘণ্টা কুলাউাড়ায় আটকা ছিল। এ সময় ওই ট্রেনের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। কুলাউড়া জংশন রেলস্টেশনের মাস্টার রোমান আহমদ বলেন, আখাউড়া থেকে ইঞ্জির আসার পর উদয়ন ট্রেন গতকাল ভোরে কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে যায়।

সর্বশেষ খবর