রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

নমুনায় মেলেনি কারণ

চট্টগ্রামে ১১ প্রসূতির মৃত্যু, অভিযোগের তীর চিকিৎসা প্রটোকল ব্যবস্থাপনার দিকে

জয়শ্রী ভাদুড়ী, ঢাকা ও রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের তিন হাসপাতালে ১১ প্রসূতির মৃত্যুর কারণ খুঁজতে ওষুধ, স্যালাইন মিলিয়ে ৪০টি নমুনা পাঠানো হয়েছিল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে। এসব নমুনায় কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। ওষুধ, স্যালাইনে সমস্যা না পাওয়ায় অভিযোগের তীর এখন চিকিৎসা প্রটোকলের দিকে।

ঔষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. সালাহউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের এখানে চট্টগ্রাম থেকে যেসব নমুনা পাঠানো হয়েছিল, সেগুলোতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।’ জানা যায়, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে চট্টগ্রামের তিনটি হাসপাতালে অস্বাভাবিকভাবে ১১ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ছয়জন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে একজন। চলতি এপ্রিলে চট্টগ্রামের বেসরকারি দুটি হাসপাতালেও মারা যান দুই প্রসূতি। এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে দ্রুত তা সিভিল সার্জন কার্যালয়কে জানাতে চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রায় ২৫০ হাসপাতালকে চিঠি দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে স্বাস্থ্য অধিদফতর গত ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে সভাপতি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালককে সদস্য সচিব করে ১০ সদস্যের ‘ডেথ রিভিউ’ নামের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। কমিটি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করছে। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা শঙ্কা তৈরি করছে। আমরা প্রথম দিকেই বিষয়টি বুঝতে পেরে দ্রুত স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করেছি। তাছাড়া, সরকার গঠিত ডেথ রিভিউ কমিটির কাছে সংশ্লিষ্ট রোগীদের কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এমন মৃত্যুর বিষয়টির কারণ দ্রুতই উদঘাটন করা জরুরি।’ ডেথ রিভিউ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. শাহানা আকতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করা ওষুধের স্যাম্পলগুলোর মান ঠিক ছিল। বিষয়টি নিয়ে আমরা দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে আজ আমরা পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারের কাছে লিখিত প্রতিবেদন জমা দেব।’ জানা যায়, তিনটি হাসপাতালে অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর চট্টগ্রাম কার্যালয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর রোগীকে ব্যবহৃত ওষুধের ৪০টি নমুনা সংশ্লিষ্ট ফার্মেসিগুলো থেকে সংগ্রহ করে ঢাকার ল্যাবে পাঠায়। নমুনার মধ্যে আছে- এনেস্থেসিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধ, স্যালাইন, ব্যথানাশক ওষুধ ও রক্ত বন্ধে ব্যবহৃত ওষুধ। গত ২৭ ও ৩০ মার্চ এসব নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।’ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. শামসুল আরেফিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সিজার-পরবর্তী প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় আমরা তিনটি হাসপাতাল সংলগ্ন ফার্মেসি থেকে রোগীকে ব্যবহৃত ইনকেজশন, অ্যান্টিবায়োটিক, এনেসথেশিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধসহ প্রায় ৪০টি নমুনা সংগ্রহ করে সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলাম। পরীক্ষায় এসব ওষুধের মান সঠিক পাওয়া যায়। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমরা ডেথ রিভিউ কমিটির কাছে জমা দিয়েছি। এখন পরবর্তী করণীয় এ কমিটিই নির্ধারণ করবে।’

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর