রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেনাটহল লক্ষ্য করে গুলি

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে

বান্দরবান প্রতিনিধি

বান্দরবানে রুমা ও রাঙামাটির বিলাইছড়ির মধ্যবর্তী দুর্গম এলাকার একটি সেনা ক্যাম্প লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণের পর গতকাল বিকালেও সেনাবাহিনীর একটি টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীরা। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী জানান, শনিবার বিকাল ৫টার দিকে রুমা সদর ইউনিয়নের লাইরুমপি পাড়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলাকালে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়। সেনাবাহিনীও পাল্টা হামলা চালালে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এদিকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী। ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ ও ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)’ সম্ভাব্য বিচরণ ক্ষেত্রগুলোকে টার্গেট করে চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে। উপজেলা সদরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব সদস্যরা যানবাহন ও পথচারীদের তল্লাশি করছে। শুক্রবারের গোলাগুলির ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া রুমা বাজারের দোকানগুলো গতকালও খোলেনি। রাস্তাঘাটে যানবাহন ও জনচলাচল প্রায় নেই বললেই চলে। রুমা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে মুদি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানগুলোতে একসঙ্গে ৫ কেজির বেশি চাল বিক্রয় করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুদি দোকানি জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদেরকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সন্ত্রাসীদের খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই গত দুই সপ্তাহ ধরে পণ্য কেনাবেচা সীমিত রাখা হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায় গুলিবিদ্ধ তিন সেনা সদস্যের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছেন- মাদারীপুর জেলার মির্জারচর সিপাহিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ওয়ারেন্ট অফিসার মো. ইদ্রিস আলী (৪১), নোয়াখালী জেলার শোশালিয়া গ্রামের বাসিন্দা কর্পোরাল মো. রফিকুল ইসলাম (৩৭) এবং গাইবান্ধা জেলার নিজ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৈনিক মো. মিলন মিয়া (২৪)। শুক্রবার বিকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হেলিকপ্টারযোগে তাদের চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে কর্পোরাল মো. রফিকুল ইসলাম এবং ওয়ারেন্ট অফিসার মো. ইদ্রিস আলীর অবস্থা শঙ্কটজনক ছিল বলে জানা গেছে। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্পোরাল রফিকুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শান্তি সংলাপ বিষয়ে মতবিনিময় সভা : এদিকে বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ এর সঙ্গে শান্তি সংলাপ আবারও শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্যশৈহ্লা। তবে কবে এই আলোচনা শুরু হতে পারে এ বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য জানাননি। চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, গত ২ এপ্রিল রুমার সোনালী ব্যাংক থেকে লুট করা পুলিশের ১০টি অস্ত্র এবং আনসারের ৪টি শটগান ফেরত দেওয়ার পরই এ আলোচনা হতে পারে। গতকাল সকালে জেলা সদরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (কেএসআই) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান। বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (কেএসআই) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বম সোশ্যাল কাউন্সিল, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, খেয়াং সোশ্যাল কাউন্সিল, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিল, মারমা অ্যাসোসিয়েশন, চাকমা সোশ্যাল কাউন্সিল, খুমী সোশ্যাল কাউন্সিল, তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ পরিষদ, চাক সামাজিক পরিষদ, পাংখোয়া-লুসাই এবং বাঙালি সামাজিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য সচিব রেভারেন্ট জারলম বম, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা, কমিটির অন্যতম সদস্য মনিরুল ইসলাম মনু, ক্রিপা ত্রিপুরা, অ্যাডভোকেট বাচিং থোয়াই মারমা, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রাঙলাই ম্রো, ত্রিপুরা সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট খুশীরায় ত্রিপুরা, চাকমা সামাজিক প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা এবং বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী মহতুল হোসেন যত্ন বক্তব্য দেন। সভায় শান্তির লক্ষ্যে ‘কেএনএফ’-এর সঙ্গে আবারও সংলাপ শুরুর পক্ষে মত দেওয়া হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর