রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঈদযাত্রার ১৫ দিনে নিহত ৪০৭

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি টাকা : বিআরটিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবারের ঈদযাত্রায় ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই যাত্রায় ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন। গত বছর রোজার ঈদে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিলেন। গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১.২৫ শতাংশ বেশি। আর প্রাণহানী ২৪.০৮ শতাংশ ও আহত ১৪৭.৪৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনটিতে ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনের দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পাশাপাশি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) দেওয়া সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়কের পাশাপাশি রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত। সড়ক, রেল ও নৌপথে ৪১৯টি দুর্ঘটনায় জন ৪৩৮ নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। তবে সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল।

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি টাকা- বিআরটিএ : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি জিডিপি লস হয়, এটাকে যদি পার্সেন্টে হিসাব করা হয় তাহলে সেটি মোট জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। আর এটা হয় শুধু সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। এটা শুধু আর্থিক হিসাব। একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি যদি কোনো পরিবারে মারা যান, তাহলে তো পুরো পরিবার ধ্বংস।’ গতকাল মহাখালী বাস টার্মিনালে বিআরটিএ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘চালকরা স্বেচ্ছায় একটা পিঁপড়াও মারতে চান না। কিন্তু নানা পারিপার্শ্বিক কারণে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। শুক্রবারও দেশের ৬৪ জেলায় আমরা ওভারস্পিড নিয়ন্ত্রণে ৪০৫টি মামলায় ১০ লাখের বেশি টাকা জরিমানা করেছি। এ অভিযান প্রতিদিন চলমান থাকবে।’ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে হার্ডকপি ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে হার্ডকপির জন্য কেউ মরিয়া যেন না হয়। এটা ওয়েল সার্কুলেটেড। ই-ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স। এটা মোবাইলে প্রদর্শন করে গাড়ি চালানো যাবে। কেউ যদি মনে করেন পুলিশ এটা মানছে না, ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানোর পরও পুলিশ মামলা দিচ্ছে তাহলে নির্দিষ্ট করে সেই পুলিশের নাম, ফোন নম্বর লিখে আমাদের জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। কোনো পুলিশ সদস্য যদি বিষয়টি না জানেন তাহলে আইনের লোক হিসেবে সেটা তার ব্যর্থতা। সেটার জন্য ওই পুলিশ সদস্য দায়ী থাকবেন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের প্রস্তাবে ডোপ টেস্ট ডিজিটাল করার কথা এসেছে। ডোপ টেস্ট নিয়ে প্রথমে আমরা কিছু সমস্যা ফেস করেছিলাম। এখন এটা নেই বললেই চলে। আমরা কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে একাধিক মিটিং করে একটা অ্যাপস প্রস্তুত করেছি যা এখনো চালু হয়নি। চালু হলে বারবার অফিসে যেতে হবে না।’

ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলেই ডাম্পিং করার হুঁশিয়ারি দিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘গাড়ির রুট পারমিট অবশ্যই আপ টু ডেট থাকতে হবে। সেটার জন্য আমাদের যা যা দরকার আমরা করব। কোনোভাবেই সড়কে রুট পারমিটবিহীন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে নামা যাবে না। এ ক্ষেত্রে চালকদের যত ধরনের সহযোগিতা দরকার আমাদের জানাবেন। সর্বোচ্চ সহযোগিতা আপনাদের করব। কিন্তু কেউ যদি ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে সড়কে নামেন, তাহলে আমরা ধরতে পারলেই সোজা ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে দেব।’ সভায় উপস্থিত ছিলেন উপপুলিশ কমিশনার আবুল মোমিন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কালাম প্রমুখ।

 

সর্বশেষ খবর