রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার মূল হোতা আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লী গ্রামে নির্মাণশ্রমিক দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মূল হোতাকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। একটি প্রতিমায় আগুনের ঘটনায়, আরেকটি গুজব ছড়িয়ে হামলা চালিয়ে দুই শ্রমিককে হত্যা এবং অন্যটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাজে বাধাদান ও তাদের আহত করার ঘটনায়। তিনটি মামলায় কয়েক শ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। হত্যা মামলার বাদী নিহত দুজনের বাবা মো. শাজাহান খান, মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাদী তপতি রানি, অন্যটির বাদী পুলিশের এসআই শংকর বালা। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী ও নিহতদের বাড়ি নওপাড়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক এমপি। এ সময় তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। মন্ত্রী নিহত দুই ভাইয়ের পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ এনে স্কুল সম্প্রসারণ কাজে নিয়োজিত সাত মুসলিম শ্রমিককে হাত-পা বেঁধে পেটানো হয়। এ ঘটনায় দুই ভাই নিহত হন। একই ঘটনায় গুরুতর আহত পাঁচ শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেলার মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে গত বৃহস্পতিবার রাতে দ্ইু ভাইকে স্কুলকক্ষে আটকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যার জেরে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রামটি এখন পুরুষশূন্য। টহলে রয়েছে বিজিবি-পুলিশ-র‌্যাব। হত্যার সঙ্গে জড়িত মূল হোতাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন একটি হত্যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন। যারাই এর সঙ্গে জড়িত, তাদের কঠোর বিচারের আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন তিনি।’ শুক্রবার রাতে ফরিদপুর জেলা পুলিশের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মোর্শেদ আলম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আগুনের সূত্রপাত হয়। তখন পাশের স্কুলে সাতজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। কিন্তু তাদের আগুন দিতে কেউ দেখেনি বা আগুন দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য তাদের থাকতে পারে- এমন সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করে পুলিশ সুপার জানান, আগুন যেভাবেই লাগুক- তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

পুলিশ সুপার জানান, ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রাম আর পঞ্চপল্লী এলাকা। এ এলাকাটি পাঁচটি গ্রাম নিয়ে। সব গ্রামই হিন্দু অধ্যুষিত। আশপাশের এলাকাগুলোও হিন্দু অধ্যুষিত। আগুন লাগার খবরে বেশি লোক জড়ো হয় আশপাশের এলাকা থেকে। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কয়েকজন মুসলিম ছিলেন কেবল ওই নির্মাণ শ্রমিকরাই। সেই কারণে উত্তেজনার মধ্যে নিছক সন্দেহের বশে তাদের ওপর হামলা হয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে জানান।

নির্মাণ শ্রমিক দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারীকে এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি পুলিশ সুপার। তিনি জানান, এ ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়েছে।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় হেফাজত : ফরিদপুরের মধুখালীতে নির্মাণশ্রমিক দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজিদুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দেশ। এ দেশের অধিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বৈচিত্র্য থাকলেও আবহমানকাল থেকেই নিজেদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান। কিন্তু মন্দিরে আগুনের ঘটনায় নিছক সন্দেহের বশে নৃশংসভাবে দুজন মুসলিম শ্রমিককে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করা হয়। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা। একই দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। সংগঠনের চেয়ারম্যান এম এ মতিন ও মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, ‘শুধু সন্দেহের বশে নিরীহ শ্রমিকদের ওপর বর্বরতম হামলা চালানোর এ ঘটনা ন্যক্কারজনক।’ অন্যদিকে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি ও প্রগতিশীল ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালও ফরিদপুরের মধুখালীর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।

সর্বশেষ খবর