রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রতারণা করে কোটিপতি দুই ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম আইডির নিরাপত্তা দুর্বলতা ও হ্যাক হওয়া আইডি উদ্ধার করে দেওয়ার নামে তারা নিজেরাই বিভিন্ন ব্যক্তির আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিত। এরপর আইডিতে থাকা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিত টাকা।

এ ছাড়া আইডিতে যুক্ত থাকা প্রবাসীর স্বজনদের কাছে মেসেজ দিয়ে মায়ের অসুস্থতার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিত। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিল্যান্সার ও ফেসবুক বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিল শামীম আহমেদ জয় (২৩) এবং মোহাম্মদ স্বাধীন আহমেদ (১৮) নামের আপন দুই ভাই। তাদের টার্গেটে থাকত ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি। এভাবে তারা কোটিপতি হয়েছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, সম্প্রতি কানাডিয়ান এক প্রবাসীর আইডির নিরাপত্তা ত্রুটি ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্ল্যাকমেল করেন জয়। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী তার বাবার মাধ্যমে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে শুক্রবার রাজধানীর ডেমরা থানার টেংরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি সিপিইউ, দুটি মোবাইল ফোন, একটি রাউটার ও ১২টি ভুয়া এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। পরে তার দখলে থাকা প্রায় ৫০০ দেশি-বিদেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া যায়।

যেভাবে প্রতারণা : সিটিটিসি প্রধান বলেন, শামীম ২০২৩ সাল থেকে প্রতারণা শুরু করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ওই অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা পরিচিত ব্যক্তিদের মেসেঞ্জারে ‘আমার মা স্ট্রোক করেছে। জরুরি ৩ হাজার ডলার পাঠাও। এমন সব বার্তা পাঠিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা শুরু করে। হ্যাক করা অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেও আদায় করা হতো অর্থ। এমনকি হ্যাক করা আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণ-স্পর্শকাতর তথ্য, গোপন ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বন্ধুদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে তাদের অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অথবা অ্যাকাউন্টের সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে একটি মোবাইল নম্বর অথবা একটি ইমেইল অ্যাড্রেস অ্যাড করার অনুরোধ করত। ভুক্তভোগী মোবাইল নম্বরটি অথবা ইমেইল অ্যাড্রেসটি অ্যাড করলে শামীম আহমেদ জয় টার্গেট অ্যাকাউন্টটিতে ‘ফরগেট পাসওয়ার্ড’ অপশনটি ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত। এরপর একটি লেমিনেটিং মেশিন ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে ফেসবুকে সাবমিট করে হ্যাককৃত অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত।

ব্ল্যাকমেল ও প্রতারণার স্বীকার ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আনত তারা। এজন্য তারা ব্যবহার করত ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র। শামীমের হাতিয়ে নেওয়া ডলার তার ছোট ভাই স্বাধীন আহমেদ নিজের এলাকা থেকে দূরে গিয়ে ঘুরে ঘুরে তুলত। অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান আরও বলেন, শামীমকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে প্রবাসীদের প্রায় ৫০০ ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া গেছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ হ্যাকারের টার্গেট। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শামীম। সিটিটিসি প্রধান বলেন, এক ভুক্তভোগীর অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ওই প্রবাসীর বাবা ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন। মামলায় সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর