বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো কোটি টাকার গাঁজার কেক-চকলেট

বিশেষ প্রতিনিধি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে দেশে পাঠানো একটি পার্সেল জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। দেখতে অনেকটা শিশুদের খেলনার মোড়কে পাঠানো এই পার্সেলে ছিল মাদক। জব্দ মাদকের মধ্যে রয়েছে গাঁজার নির্যাসযুক্ত (টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল) কুশ, গাঁজার কেক (ক্যানাবিস কেক) ও চকলেট (ক্যানাবিস ইনফিউজড গামিজ)। এ ঘটনায় ‘জড়িত’ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল হলো গাঁজার নির্যাস দিয়ে তৈরি এক ধরনের রাসায়নিক। কুশ হলো হলো গাঁজার ফুল প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা মাদক। দেশে এসব মাদকের ব্যবহার কম। ফলে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সেগুলো মাদক। উদ্ধার করা মাদকের দাম প্রায় ১ কোটি টাকা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় পার্সেলের মাধ্যমে আসছে এসব উচ্চমূল্যের মাদক। এসব মাদক তরুণ বয়সী একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। চক্রের সদস্য তিন তরুণ ইমরান আহমেদ রাজ (২০), মো. রাসেল মিয়া (২৯) ও মো. রমজান মিয়াকে (২০) গত সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী জানান, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ডাকযোগে সন্দেহজনক একটি পার্সেল আসার তথ্য তাদের কাছে ছিল। পার্সেলটি এমনভাবে মোড়কজাত করা হয়েছিল, যাতে যন্ত্রের পরীক্ষায় (স্ক্যান) ধরা না পড়ে। ডাক বিভাগের সহযোগিতায় পার্সেলটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা নিশ্চিত হন যে সেগুলো মাদক। তিনি বলেন, পার্সেলটির ওপর কোনো ঠিকানা লেখা ছিল না। শুধু একটি মুঠোফোনের নম্বর লেখা ছিল। এর সূত্র ধরেই আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার থেকে মো. রাসেল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে তার কথার সূত্র ধরেই বাকি দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। মহাপরিচালক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ধরনের মাদক কার মাধ্যমে আসে, কারা সেবন করে, সে বিষয়গুলো তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। গ্রেফতার তিন ব্যক্তিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় এসব মাদক বৈধ কিংবা অবৈধ সেটি বিষয় না। বাংলাদেশে এই মাদক অবৈধ, তাই বাংলাদেশে এই মাদক পাঠানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশে এটা অবৈধ জেনেই তারা বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেটে মাদক পাঠিয়েছে। এই পার্সেলটি যে কোনো আমেরিকান নাগরিক পাঠিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। ওখানে বসবাসরত অন্য কোনো দেশের নাগরিকও পাঠাতে পারেন।

তরুণরা কীভাবে কোটি টাকার মাদকের কারবার করে আসছিল এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মার্কেটিং অফিসার। আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করব তাদের অর্থের উৎস কী এবং তারা কীভাবে অর্থ সেখানে পাঠিয়েছে। এর সঙ্গে মানি লন্ডারিং জড়িত থাকতে পারে। তাদের পেছনে আরও কেউ আছে কি না এমন সব বিষয়ে তদন্ত করব।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কর্মকর্তারা একটি কার্টনের ভিতর ছয়টি প্যাকেটের মধ্যে থেকে ১ হাজার ৩৫০ গ্রাম কুশ উদ্ধার করেন। একই কার্টনের ভিতরে ২৮ গ্রাম করে ওজনের ৯টি গাঁজার চকলেট উদ্ধার করা হয়। গাঁজার কেক উদ্ধার করা হয় ১০টি, প্রতিটির ওজন ৬০ গ্রাম। সব কটিই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি।

সর্বশেষ খবর