সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কী হচ্ছে কিরগিজস্তানে

♦ পরিস্থিতি থমথমে, শঙ্কা কাটেনি ♦ পরীক্ষা না দিয়েই ফিরবেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ♦ বাংলাদেশি হতাহতের খবর মেলেনি : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

কী হচ্ছে কিরগিজস্তানে

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সহিংসতা-পরবর্তী থমথমে পরিস্থিতিতে শঙ্কা কাটেনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। ওই এলাকার নিরাপত্তায় প্রায় ২-৩ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

কিরগিজস্তানের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ডা. জেরিত ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ‘বর্তমানে কিরগিজস্তানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শিক্ষকরাও স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের হোস্টেল থেকে বের হতে দিচ্ছি না। তবে আনুষঙ্গিক কেনাকাটার জন্য তাদের বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। কিরগিজস্তানের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের সবাই মেডিকেল শিক্ষার্থী। ডা. জেরিত বলেন, ‘এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে হোস্টেলে থাকতে হয়। তৃতীয় বর্ষে ওঠার পর কেউ চাইলে বাইরে চলে যেতে পারেন। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বর্তমানে তাদের হোস্টেলে অবস্থান করছেন। অন্যরা বাইরের বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন।’ হামলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হোস্টেলে মিসরীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সমস্যা হয়। পরে মিসরীয় শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের মারধর করেন। ঘটনাটি তিন-চার দিন আগের। এরপর সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। কিন্তু পরে সেই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।’

তিনি বলেন, ‘তবে আমরা আগে থেকেই বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছিলাম যে রাত ৮টার পর কেউ যেন বাইরে না যায়। সে সময় আমাদের হোস্টেল গেট বন্ধ ছিল, পুলিশি নিরাপত্তা ছিল। তবে রাতে স্থানীয় তরুণ জনতা পুরো শহরে আন্দোলন এবং ভাঙচুর শুরু করে।’ ডা. জেরিত আরও বলেন, ‘এখন শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই দেশে ফিরতে চাচ্ছেন। এমনিতেই পরীক্ষার পর দেশে ফিরতে তাদের জন্য ১২, ১৬ ও ২৬ জুন চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা রেখেছিলাম। এখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠায় আমরা এখনই চার্টার্ড ফ্লাইট ম্যানেজের চেষ্টা করছি। তবে আমরা সবাইকে দেশে ফিরে যেতে বলছি না। যারা যেতে চান তাদের তালিকা তৈরি করছি এবং সেভাবেই চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছি। তবে আমরা ফ্লাইটের কোনো তারিখ এখনো ঠিক করিনি।’

তিনি বলেন, ‘কিরগিজস্তানে পাকিস্তানি শিক্ষার্থী প্রায় ১৫ হাজার। তাদের জন্য আগে থেকেই প্রতি সপ্তাহে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা ছিল। যে কারণে তারা সেই চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে ফিরে গেছেন। আমাদের চার্টার্ড ফ্লাইট রয়েছে ১২, ১৬ ও ২৬ জুন। সেটা এগিয়ে আনতে হচ্ছে। যেহেতু শনি ও রবিবার এখানে অফিশিয়ালি সবকিছু বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের পাসপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে, ফলে সেগুলো আমাদের এখন সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাছাড়া একেকজন একেক জায়গায় থাকে, যে কারণে একটু সময় লাগছে বলে জানান তিনি। কিরগিজস্তানে স্থানীয়দের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর গুরুতর আহত বা প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া তাসখন্দে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে শিগগিরই কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেক সফর করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা উজবেকিস্তানে আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দূতাবাস কিরগিজস্তানের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও কিরগিজ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রাখছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো গুরুতর আহত বা প্রাণহানির খবর নেই। দূতাবাস এরই মধ্যে তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি জরুরি যোগাযোগ নম্বর শেয়ার করেছে, যাতে এ বিষয়ে যে কোনো সমস্যার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তাসখন্দে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুস্থতা সম্পর্কে জানতে শিগগিরই বিশকেক সফর করতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ১৩ মে কিরগিজ ও মিসরের ছাত্রদের মধ্যে মারামারির একটি ভিডিও ভাইরাল হলে স্থানীয় জনতা বিদেশি ছাত্রদের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, সংঘবদ্ধ জনতা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বিদেশি ছাত্রদের পেটাচ্ছে। ওই সংঘাতের কারণে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। দেশটিতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কিরগিজস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সে দেশের সরকারকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। গতকাল প্রেস ক্লাবে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ওকাব) অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোনো বাংলাদেশি ছাত্র খুব জখম হয়েছে এমন খবর নেই, রাষ্ট্রদূতকে দেশটিতে (কিরগিজস্তান) গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর