সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

পাঁচ বছর ধরে বন্ধ জাতীয় শিশুপার্ক

♦ আগামী তিন বছরেও খোলার সম্ভাবনা নেই ♦ চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত শিশুরা

হাসান ইমন

পাঁচ বছর ধরে বন্ধ জাতীয় শিশুপার্ক

রাজধানীর শাহবাগে পরিত্যক্ত অবস্থায় শিশুপার্ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ছয় বছর আগেও ঢাকা শহরে শিশু-কিশোরদের আনন্দ-বিনোদনের প্রধান আকর্ষণ ছিল শাহবাগের শিশুপার্ক। যে কোনো সরকারি ছুটির দিন বা ঈদের ছুটিতে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো শিশু-কিশোর এ পার্কে যেত। কিন্তু সংস্কার বা আধুনিকায়নের নামে পাঁচ বছর ধরে পার্কটি বন্ধ। এতে বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। সংস্কার জটিলতায় পার্কটি আগামী তিন বছরেও খোলার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ের মধ্যে শিশুপার্কের নিচে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসা দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্কিং ও কিছু অবকাঠামো সংস্কার কাজ শেষে এটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশুপার্কের গেট দিয়ে ঢুকতে চোখে পড়ে ইট, বালি, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ। এক পাশে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের পুঁইশাক, ডাঁটাসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করতে দেখা গেছে। আর পার্কের মাঝখানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ চলছে। শিশুপার্কের ভিতরে যে রাইডগুলো ছিল এখন তার অধিকাংশেরই অস্তিত্ব নেই। চরকিজাতীয় আলাদা দুটি রাইড ৮ ফুট উঁচু টিন দিয়ে ঘেরা। দুটির অবস্থাই বেহাল। রাইডসগুলোতে মানুষের পুরনো শার্ট-প্যান্ট ঝুলছে। মরিচা ধরে রাইডসগুলো ভেঙে পড়ে আছে। তবে টিকিট কাউন্টারের একটি ভবন এখনো রয়েছে। পুরো জায়গার চারপাশ টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুপার্কে আধুনিক রাইড বসানোর জন্য ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ডিএসসিসির বোর্ড সভায় ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার এই প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। যেখানে প্রকল্পের শুরু ২০২৩ সালের জুলাই এবং ২০২৬ সালের জুনে সমাপ্ত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় বাস্তবায়ন দেড় থেকে দুই বছর বিলম্ব হবে। সব মিলিয়ে ২০২৭ সালের আগে পার্কের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তারা আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের (তৃতীয় পর্যায়) যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তার একটা অংশ পড়েছে আগের শিশুপার্কের জায়গায়। সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন নতুন করে শিশুপার্ক নির্মাণের সময় এই পার্কিংয়ের দুই পাশে রাইডগুলো বসানো হবে। শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য শাহবাগ থানা ভবনটি অন্যত্র সরানো হবে বলে জানান তারা। জানতে চাইলে ডিএসসিসির যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান বলেন, জাতীয় শিশুপার্ক এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং নির্মাণ প্রকল্প চলছে। কাজ শেষ করে ডিএসসিসিকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়নি। ফলে আমরা জাতীয় শিশুপার্ক প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারিনি। দ্রুত বুঝিয়ে দিতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কয়েকজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আরও কয়েকজন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দিলেই কাজ শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর