বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

৮৭ উপজেলায় আজ ভোট আরও তিনটিতে স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ আজ। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে নির্বাচনের আগের দিন গতকাল আরও তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার স্থগিত করা হয় ১৯ উপজেলার ভোট। ফলে তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ ধাপে ১৬ উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। বাকি উপজেলায় ব্যালটে ভোট গ্রহণ করবে ইসি। সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ভোটের পরও দুই দিন তারা থাকবেন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দুর্গম এলাকার ৪১৪ কেন্দ্রে গতকাল ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। আর বাকি ৭ হাজার ৩৬টি কেন্দ্রে ব্যালট যাবে আজ ভোটের দিন সকালে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি (উপজেলায়) এলাকায় ভোটের দিন সাধারণ ছুটি রয়েছে। এদিকে ভোট নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের উৎসবের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে নির্বাচনি এলাকায়।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী না দিলেও ভোটের মাঠে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। সব প্রার্থীই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা ছাড়াও বিএনপির নেতারাও বেশ কিছু উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইসি জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় তফসিল দেওয়া হলেও ভান্ডারিয়া উপজেলায় তিন পদেই প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল, আইনি জটিলতা ও ধাপ পরিবর্তনের কারণে ২৪ উপজেলায় ভোট হচ্ছে না। ফলে আজ ভোট গ্রহণ হবে ৮৭ উপজেলায়। এসব উপজেলায় মোট প্রার্থী ১১৫২ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৪৫৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তৃতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১২ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন রয়েছেন। ইসি জানিয়েছে, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট বিজিবি মোতায়েন থাকবে ২৯৯ প্লাটুন। সর্বমোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৫৯ হাজার ২১৯ জন। এর মধ্যে ভোট কেন্দ্রে থাকবে ২৯ হাজার ৯৫৮ জন; মোবাইল টিমে মোট পুলিশ সদস্য থাকবে ৭ হাজার ৭৯৪ জন; স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ৩ হাজার ৩৬৪ জন। ভোট কেন্দ্রে এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৬৯ জন। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ৩০ উপজেলায় ২৯ প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি, র‌্যাবের ১৮টি টিম এবং কোস্টগার্ড মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

তিন দিন মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ : উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৮৭ উপজেলায় তিন দিনের জন্য মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া গতকাল ২৮ মে দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে আজ ২৯ মে দিবাগত মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এদিকে গত ২৭ মে দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে কাল ৩০ মে মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। অন্যদিকে নৌ সচিবকে পাঠানো পৃথক এক চিঠিতে ভোটের দিন যন্ত্রচালিত নৌযান চলাচল বন্ধের জন্যও বলা হয়েছে।

আরও ৩ উপজেলায় ভোট স্থগিত : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে নির্বাচনের আগের দিন আরও তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলাগুলো হলো- চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুরী। গতকাল ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম উপজেলা তিনটিতে ভোট স্থগিতের কথা জানিয়েছেন। এর আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সোমবার ১৯ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সব মিলিয়ে ২২ উপজেলায় ভোট স্থগিত করল কমিশন। এদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৬০ নম্বর জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল রাতে কমিশনের উপসচিব মো. মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ওই কেন্দ্রে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।

সহিংসতা করে কেউ পার পাবে না : নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতা করে কেউ পার পাবে না। গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে যে উপজেলাগুলোয় নির্বাচন বন্ধ আছে, সেগুলোতে ভোট হবে, তা আবহাওয়া কবে ভালো হবে, সামনে ঈদ, স্থানীয় প্রশাসনের মতামত ইত্যাদি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ভোট আছে, সেদিনও হতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের মতামতের ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন যদি এখনো বলে যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়, সেখানে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর