সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতিতে অংশ নেন তারা। এর আগে গত রবিবার দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এ পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে একযোগে মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করেন। কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা পেনশন স্কিমকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, সরকার অবিলম্বে এই স্কিম বাতিল না করলে ৪ জুন সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। এর মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা না এলে আন্দোলনের বৃহত্তম কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তারা জানান, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না। শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হবে, যেটা আগে কাটা হতো না। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন; কিন্তু নতুন এ স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সেটিও সুস্পষ্ট করা হয়নি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ থেকে ৬০ বছর করা হয়েছে। মাসিক চিকিৎসাভাতা, উৎসবভাতা, বৈশাখী ভাতাও নতুন প্রত্যয় স্কিমে দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরা জানান, সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহার চেয়ে গতকাল কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে দুই ঘণ্টা ক্লাস বর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। তিনি শিক্ষা খাতে বিনিয়োগকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি বাজেটে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা খাতের বাজেটকে কাটছাঁট করা হচ্ছে। তাই শিক্ষকরা আজ পাঠদান ছেড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। শিক্ষকদের ওপর আরোপিত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চাই। অন্যথায় শিক্ষকরা বৃহত্তম আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম ও পরীক্ষা বর্জন করেন তারা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রত্যয় পেনশন স্কিম বাতিলের দাবি শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নয়, এটা বাংলাদেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি। এ পেনশন স্কিম যদি বাতিল না করা হয় তাহলে আমরা আরও কঠিন কর্মসূচিতে যাব। একই দাবিতে গতকাল দুই ঘণ্টা ক্লাস বর্জন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা সংবিধান পরিপন্থি। ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এ কর্মসূচি পালন করছি। অবিলম্বে এ স্কিম নীতিমালা প্রত্যাহার না হলে লাগাতার আন্দোলন চলবে। রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কামরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম নীতিমালা চরম বৈষম্যমূলক। অবিলম্বে এ নীতিমালা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গতকাল কর্মবিরতীতে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ভবনের নীচতলায় সমবেত হয়ে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় একটি আলোচনা সভারও আয়োজন করে শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, একটি কুচক্রীমহল শিক্ষাকে তথা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. অহিদুজ্জামান বলেন, যারা শিক্ষকদের জ্ঞান চর্চাকে বাধাগ্রস্ত ও অসম্মান করতে চায় তাদের ঘৃণ্য অপচেষ্টাকে রুখতে শিক্ষক ফেডারেশনকে আরও কঠিন আন্দোলনের ডাক দেওয়ার আহ্বান জানান। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্ভুক্তকরণ ও শিক্ষদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকীর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে শিক্ষকরা বলেন, প্রত্যয় স্কিমটি নামে সর্বজনীন হলেও আদৌতে সর্বজনীন নয়। তড়িঘড়ি করে জারি করা এই অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক স্কিম অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান শিক্ষকরা।