রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধ্বংসস্তূপের নিচে বিষাদের ঈদ

প্রতিদিন ডেস্ক

ধ্বংসস্তূপের নিচে বিষাদের ঈদ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর। বাসিন্দারা ঈদ করবেন এ রকম বাসস্থানেই -এএফপি

বিশ্বজুড়ে পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসবের আমেজ। আজ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে উদ্যাপিত হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম বড় এ ধর্মীয় উৎসব। তবে ঈদের খুশি যেন বিষাদে রূপ নিয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজার বাসিন্দাদের জীবনে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনাহারে, বোমাতঙ্কে প্রতি মুহূর্তে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই করে যাচ্ছে তারা। কখন বোমা এসে পড়ে-এ আতঙ্কে আকাশের পানে তাকিয়ে দিন পার করছে এ জনপদের শিশুরা। নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি, পর্যাপ্ত খাবার ও বাসস্থান। প্রতি মুহূর্তে নির্বিচারে বোমা ফেলছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।

গত শুক্রবারও ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মারা গেছে নবজাতকও। ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৭ হাজার ২৬৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৮৫ হাজার ১০২ জন ফিলিস্তিনি। এর বাইরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে অনেক মানুষ। গাজায় খাবার ও পানির তীব্র সংকটের কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি জানিয়েছে, সংকটজনক অবস্থায় পড়েছে পানি। মানুষ অনাহারে মরতে বসেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক কার্ল স্কাউ বলেছেন, পরিষ্কার পানি বা পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাবিহীন অবস্থায় গাজার দক্ষিণে আটকে পড়েছে কমপক্ষে ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ। সেখানে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা হতাশাজনক।

দীর্ঘ আট মাসের চলমান যুদ্ধের মধ্যেই পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর পার করেছে গাজাবাসী। এবার দরজায় ঈদুল আজহা। কিন্তু ক্রমাগত হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি আটকে দিয়েছে ত্রাণ সরবরাহ। এতে অনাহারে, পানি সংকটে, বোমাতঙ্কে প্রতি মুহূর্তে প্রাণ বাঁচানোর সংগ্রাম করছে ফিলিস্তিনিরা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, সবশেষ গ্রীষ্মে গাজা উপত্যকায় ঈদের আনন্দ দেখেছিল ফিলিস্তিনিরা। শিশুদের জন্য নতুন পোশাক, বড় পারিবারিক ভোজ, বাড়ি বাড়ি দাওয়াত খাওয়া সবই ছিল। এখন সেগুলো শুধুই স্মৃতি। গত এপ্রিলে ঈদুল ফিতরের দিনটিও গাজাবাসীর কেটেছে মৃত্যু আতঙ্কের মাঝে। নতুন কাপড় দূরের কথা, জোটেনি খাবার। ইসরায়েলের নারকীয় তাণ্ডবে সন্তানহারা শত শত মা ঈদের দিন ভিড় জমান রাফার কবরস্থানে। সন্তানের কবরের পাশে চোখের পানি ফেলে পার করেন ঈদ। ঈদুল আজহায়ও বদলায়নি চিত্র। যুদ্ধে মেয়ে হারানো নাদিয়া হামুদা কয়েক মাস আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে উত্তর গাজায় আসেন। দেইর আল-বালাহ শহরের একটি তাঁবুতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘এ বছর কোনো ঈদ নেই। যখন আমরা আজান শুনি, তখন আমরা যাদের হারিয়েছি, আমাদের কী ঘটেছে, আমরা আগে কীভাবে জীবনযাপন করতাম এগুলো ভেবে শুধু চোখের পানি ফেলি।’ গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরেও নেই ঈদের আনন্দের ছিটেফোঁটা। পাঁচ বছরের শিশুরাও অবিরত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকছে কখন বোমা এসে পড়ে। পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা বলছে, গাজায় একদিকে চলছে সামরিক যুদ্ধ, অন্যদিকে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর পর মানুষের হাতে কাজ নেই, অর্থ নেই, খাবার নেই। এখানে এখন ঈদের আনন্দ বলে কিছু নেই।

বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে টানা আট মাস যুদ্ধের পর অনেক পরিবার এবারের ঈদে তাঁবুতে টিনজাত খাবার খাবে। ঈদে নতুন পোশাক বা উপহার কেনার অর্থ নেই। স্থানীয় বাজারে কোরবানির পশু নেই বললেই চলে। যা আছে তার দাম আকাশছোঁয়া। আবদেল সাত্তার আল-বাতশ নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমি ও আমার সাত সদস্যের পরিবার মাংস খাইনি। এক কেজি মাংসের দাম প্রায় ৫০ ডলার। একটি জীবন্ত ভেড়ার দাম যুদ্ধের আগে ছিল ২০০ ডলারের কম, এখন ১ হাজার ৩০০ ডলার (প্রায় দেড় লাখ টাকা)। তা-ও ভেড়া নেই বললেই চলে। যুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছে। টাকা নেই, কাজ নেই, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।’

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাজমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে গাজার একটি শিশুকে বলতে শোনা যায়, ‘গাজায় ঈদ উদ্?যাপন বা আনন্দ করার মতো কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। আমরা আশা করেছিলাম যে যুদ্ধ কয়েক দিন বা সপ্তাহ স্থায়ী হবে, তবে মাস নয়।’

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, শিগগিরই তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না। বার্তা সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৩ জুন ইতালিতে জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নেতারা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেন। শিগগিরই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘না, সম্ভাবনা নেই। তবে আমি আশা হারাইনি।’

সর্বশেষ খবর