মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রথম দিনেই উত্তেজনা ভারতের সংসদে

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল ১৮তম লোকসভার অধিবেশনের শুরুর দিনেই তৃতীয়বারের জন্য সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন মোদি। তার সঙ্গেই শপথ নিলেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসহ কয়েকজন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য। বাকিরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন আজ। অধিবেশনের প্রথম দিনই সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। বাইরে বিক্ষোভ করেন বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ করান প্রোটেম স্পিকার ভর্তৃহরি মাহতাব। তার আগে সাত বারের বিজেপির সংসদ সদস্য ভর্তৃহরি মাহতাবকে প্রোটেম স্পিকার হিসেবে শপথ গ্রহণ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

এরপর প্রধানমন্ত্রীসহ একে একে অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, নীতীন গড়করি, শিবরাজ সিং চৌহান, কিরেন রিজুজু, মনসুখ মান্ডব্য, জি কিষান রেড্ডি, চিরাগ পাসওয়ানসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রোটেম স্পিকার। আর এভাবেই নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শুরু হলো ভারতের সংসদের অধিবেশন। স্বাভাবিকভাবে গত দুই মেয়াদের তুলনায় এবার বিরোধীরা অনেকটাই শক্তিশালী। আর সেটাই দেখা গেল এদিনের অধিবেশনের শুরুতে। নেট, নিট পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ, সংসদ ভবন চত্বরে বিভিন্ন ভাস্কর্য স্থাপন, সাতবারের বিজেপি এমপি ভর্তৃহরি মাহতাবকে প্রোটেম স্পিকার নিয়োগসহ একাধিক ইস্যুতে ঝড় তোলেন বিরোধী সংসদ সদস্যরা। স্পিকার নিয়োগ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন, আট বারের কংগ্রেস সংসদ সদস্য কোডিকুন্নিল সুরেশকে উপেক্ষা করে ভর্তৃহরিকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগের ফলে সরকার নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং সুরেশের জ্যেষ্ঠতাকে অসম্মান জানানো হয়েছে। আবার সংসদ সদস্য হিসেবে যখন শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান শপথ গ্রহণ করেন, ঠিক তখনই নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে স্লোগান দেয় বিরোধীরা। অন্যদিকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান চলাকালীন সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র সংসদ সদস্যরা। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে সংবিধানের কপি হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, তৃণমূল সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, সায়নী ঘোষ, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ডিএমকের কানিমোঝি, টিআরের বালুকে।

প্রত্যেকেই হাতে সংবিধান নিয়ে ‘সংবিধান রক্ষা, গণতন্ত্র রক্ষার’ স্লোগান দিতে থাকেন। এমনকি সংসদ সদস্য হিসেবে নরেন্দ্র মোদি যখন শপথ নিতে ওঠেন, তখনো রাহুল গান্ধীসহ বিরোধী সংসদ সদস্যদের হাতে সংবিধান নিতে দেখা যায়। এনিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেভাবে সংবিধানের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছেন সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এটা হতে দেব না। সেই কারণেই আমরা শপথ গ্রহণের সময় সংবিধান হাতে নিয়েছিলাম। আমাদের বার্তা স্পষ্ট। কোনো শক্তিই ভারতের সংবিধানকে ছুঁতে পারবে না।’ এদিকে অধিবেশনের শুরুতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রে আজকের দিনটি গৌরবের, বৈভবের। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো নতুন সংসদ ভবনে সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান। এতদিন পুরনো সংসদ ভবনে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান হতো। আমি প্রত্যেক নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যকে হৃদয় থেকে স্বাগত, অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাচ্ছি। শ্রেষ্ঠ ভারত নির্মাণ ও বিকশিত ভারত তৈরির স্বপ্ন নিয়ে আজ ১৮তম লোকসভার সূচনা হচ্ছে। জনগণ আমাদের সরকারকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য জনাদেশ দিয়েছে। আমাদের নীতি, আমাদের উদ্দেশ্যকে সমর্থন দিয়েছে। আমরা সব সময় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করব, দেশসেবা করার জন্য ঐকমত্য গড়ে তোলা এবং জনগণের আশাআকাক্সক্ষা পূরণ করার চেষ্টা করব।’ দেশে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি উত্থাপন শেষে কংগ্রেসকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সংবিধানের গরিমা বোঝেন, সংবিধানকে সম্মান করেন, তাদের কাছে ২৫ জুন দিনটি ভোলার নয়। গোটা দেশকে সেদিন কারাগার বানিয়ে ফেলা হয়, গণতন্ত্রে কালি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার ৫০ বছর পূর্তি হবে। এ ৫০ বছর পূর্তিতে দেশবাসী সংকল্প নেবে, যে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে।’ জরুরি অবস্থা নিয়ে মোদির এ মন্তব্যের প্রতিবাদে তাকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে জরুরি অবস্থা জারি না করেও মোদি সরকার সেই আচরণটাই করে যাচ্ছে। আপনি কতদিন ধরে এভাবে দেশ চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন?’

সর্বশেষ খবর