মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইভিএম নিয়ে নতুন চিন্তায় ইসি

ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব

গোলাম রাব্বানী

ইভিএম নিয়ে নতুন চিন্তায় ইসি

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১০ দিন আগে আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইসি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেষ সময়ে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে জটিলতা হতে পারে। চলতি ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ালে ইভিএমের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হোঁচট খেতে পারে ইভিএমে ভোট গ্রহণ ব্যবস্থা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ালে জুনের পরেই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা ইভিএম ধ্বংস করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

যদিও ইভিএমের বিষয়ে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএম গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে অনেক বেশি সহায়ক। প্রযুক্তির দিকে আমাদের এগোতে হবে। অনেকে অভিযোগ তুলেছিলেন এভাবে বা ওভাবে দিলে ভোট চলে যায় অন্য জায়গায়। দীর্ঘ দুই বছর ধরে এটি নিয়ে কাজ করছি। ইভিএম প্রযুক্তিতে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। ইভিএম কী হবে আমি জানি না। তবে আমার এবং আমার সহকর্মীদের সুপারিশ থাকবে ইভিএমের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি জনগণের আস্থা ইভিএমের ওপর ফিরিয়ে আনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের আগেই ইভিএমের নতুন প্রকল্প নাকচ করে দিয়েছে সরকার। চলমান প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়লে ইভিএমের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অর্থসংকটের কারণে নতুন করে ইভিএম না কেনায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার হয়নি এ মেশিন। তবে ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় সরকারের উপজেলা নির্বাচনসহ বিভিন্ন উপনির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব গত বুধবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। ইসি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৩ জুন কমিশন বৈঠকে ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ না বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয়ের অবশিষ্ট ১১৬ কোটি টাকা দিয়েই আপাতত ইভিএম কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম নষ্ট হয়ে গেছে। এসব অকেজো ইভিএম ধ্বংস করার তথা পুড়িয়ে ফেলার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।

ইভিএম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হয়নি বলেই ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এসব ইভিএম ধ্বংস না করা হলে বার্ষিক ২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হবে। এর আগে ইসি জানিয়েছে, দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৭০ হাজার ইভিএম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) সংরক্ষিত রয়েছে। বাকি ৮০ হাজার মেশিন মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার হয়েছে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ৪১ জেলায় মাসিক ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ টাকা হারে ২৯ হাজার ৯০২টি ইভিএম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বিএমটিএফ-এর ওয়্যারহাউসে রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬২টি ইভিএম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ইভিএম সংরক্ষণে বার্ষিক ভাড়া গুনতে হবে প্রায় ২৪ কোটি ২৪ লাখ। এদিকে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ওয়্যারহাউস ব্যবহার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু প্রকল্পের ডিপিপিতে ইভিএম সংরক্ষণের বিষয়টি না থাকায় এখন ওয়্যারহাউসের ভাড়া পরিশোধ নিয়ে জটিলতায় পড়েছে সংস্থাটি। জানা গেছে, বিএমটিএফের ওয়্যারহাউসে ইভিএম রাখার ভাড়া বাবদ প্রায় ৫২ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে ইসির। এ ছাড়া ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৬০ কোটি এবং র?্যাকের বকেয়া বাবদ ৩১ কোটিসহ মোট প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু জটিলতার কারণে এই অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না ইসি।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিটি ইভিএম সংরক্ষণে সম্ভব্য বার্ষিক ব্যয় হচ্ছে ১৩৪৪ টাকা। সেই হিসেবে মাঠপর্যায়ে ৪১ জেলায় মাসিক ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ টাকা হারে ২৯ হাজার ৯০২টি ইভিএম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যার বার্ষিক ভাড়া ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইসি বলছে, ৬৪ জেলায় র‌্যাকসহ ইভিএম সংরক্ষণে জন্য দ্বিগুণ জায়গা প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী ইভিএম ও র‌্যাক সংরক্ষণের জন্য সম্ভব্য বার্ষিক ব্যয় হবে ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৯৪ টাকা। এ ছাড়া বিএমটিএফ-এর ওয়্যারহাউসে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬২টি ইভিএম করার জন্য মাসিক ভাড়া ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হিসেবে বার্ষিক ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে ইভিএম প্রতি ব্যয় হবে ১ হাজার ১৪২ টাকা। নির্বাচন কমিশন বলছে, বর্তমানে মাঠপর্যায়ে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ দেড় লাখ ইভিএম সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিতে ৬৪ জেলায় র‌্যাকসহ ইভিএম সংরক্ষণ ও বিএমটিএফ এ ইভিএম সংরক্ষণের জন্য বার্ষিক ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৯৪ টাকা।

সর্বশেষ খবর