মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে এমপি আনার খুন রহস্য

খুনের আলামত তিনটি ফোন পুকুরে ফেলেন গ্যাস বাবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুনের আলামত তিনটি ফোন পুকুরে ফেলেন গ্যাস বাবুল

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। খুনের আলামত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের কথা বলে তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ দিনের ফের রিমান্ড আবেদন জানালে তা নাকচ করে গতকাল এ আদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ঝিনাইদহের একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আলামত (তিনটি মোবাইল ফোন) উদ্ধার অভিযান চালানোর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল উদ্দিন আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে তার স্টেডিয়ামপাড়ার বাসা থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তিন দিন পর আনার অপহরণের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান। পরে গত ১৪ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ওইদিন জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলায় শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে আমানুল্লাহ সাঈদ, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেফতার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতে শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দিন জানান, আদালত আসামি বাবুর রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করেছেন। একই সঙ্গে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেখানে জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাবুকে নিয়ে ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করবে। এদিকে গ্যাস বাবুর রিমান্ড চেয়ে করা আবেদনে ডিবি আদালতকে জানিয়েছে, আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ডে প্রধান ভূমিকা রাখা শিমুল ভূঁইয়ার মুঠোফোন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৫ মে শিমুল ভূঁইয়া কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসেন। ১৬ মে আনোয়ারুল আজিম হত্যার বিষয়ে মোবাইল ফোনে শিমুল ভূঁইয়া কাজী কামালের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শিমুল ভূঁইয়া ও কাজী কামাল ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একসঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হোয়াটসঅ্যাপে আনোয়ারুল আজিমের ছবি বিনিময় করেন। ১৭ মে থেকে ১৯ মের মধ্যে এ দুজন হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন। খুদে বার্তা আদানপ্রদান করেন।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে কাজী কামালকে গ্রেফতার করা হয় উল্লেখ করে ডিবি আবেদনে আরও বলেছে, পরে জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা বলার কথা স্বীকার করেন কাজী কামাল। কামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই তিনটি মোবাইল ফোন কোথায়? জবাবে তিনি বলেছিলেন, মোবাইল ফোন তিনটি হারিয়ে গেছে। এ বিষয়ে তিনি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। পরে কাজী কামাল ১৪ জুন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, দুটি মুঠোফোন তিনি ঝিনাইদহের গাঙ্গুলী হোটেলের পেছনের পুকুরে ফেলেছেন। আরেকটি মুঠোফোন ফেলেছেন স্টেডিয়ামের পেছনের পুকুরে।

এদিকে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সামনে আসার পর এরই মধ্যে কিছুটা পাল্টে গেছে মামলার তদন্ত। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকা কুশীলবদের নাম বেরিয়ে আসছে। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকা আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের নাম বের হয়ে আসছে। তদন্তের এ পর্যায়ে আনার হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টুকে নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, আনার হত্যাকাণ্ডের ক্লু বের করতে ডিবি পুলিশের দল রাত-দিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ মামলায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না। সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। প্রসঙ্গত, আনোয়ারুল আজিম ১২ মে কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয়। ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এ তথ্য জানায়। এরপর ঢাকা থেকে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান নামের তিনজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা ও তার লাশ গুম করার ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ।

সর্বশেষ খবর