মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রশাসনে শীর্ষসহ খালি হচ্ছে দুই ডজন সচিবের পদ

♦ মাসে গড়ে চারজন অবসরে যাবেন ♦ অনেকেই স্বপ্ন বুনছেন শীর্ষ পদে যাওয়ার

ওয়াজেদ হীরা

এ বছর প্রশাসনের শীর্ষ দুটি পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার অন্তত দুই ডজনের বেশি পদ খালি হচ্ছে। অর্থাৎ কেউ নিয়মিত অবসরে যাবেন আবার কারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না পেলে নিচের স্তর থেকে অনেকেই পদোন্নতি পেয়ে প্রশাসনের শীর্ষ পদের চেয়ারে বসতে পারবেন। এতে করে অতিরিক্ত সচিবদের অনেকেই সচিব হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ছয় মাস অর্থাৎ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ২৬ কর্মকর্তার অবসরে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ৯ কর্মকর্তার। চলতি বছরে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবসান হবে। নতুন করে চুক্তির মেয়াদ না বাড়লে এই পদে দেখা যাবে নতুন মুখ। ইতোমধ্যেই এই শীর্ষ পদে কারা আসতে পারেন তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। এর বাইরেও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বা সচিব অবসরে গেলে কেউ কেউ চুক্তিতে নিয়োগও পেতে পারেন। তবে আমলাদের অনেকেই মনে করছেন সরকার চতুর্থবারের মতো ধারাবাহিক ক্ষমতায় এসেছে। নতুন এই সময়ে চুক্তিতে নিয়োগ যতটা সম্ভব কম দেবে। একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, একটা আশা নিয়েই তো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ওপরে যারা আছেন তারাও সরকারের জন্য কাজ করেন, আমরা ও আমাদের নিচে যারা আছে সবাই। এখানে চুক্তি হলে আমাদের অনেকেই বঞ্চিত হয়, কষ্ট বাড়ে। কাক্সিক্ষত পদে যেতে না পেরে নীরবেই বিদায় নিতে হয়। এটি আমরা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করি না।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রত্যেক পদ পূরণের জন্য রাষ্ট্রের কাছে পর্যাপ্ত জনবল আছে। পদোন্নতি দিয়ে পূরণ করা উচিত। চুক্তি নিয়োগ না দেওয়াই ভালো। চুক্তিতে কেউ নিয়োগ পেলে যিনি দীর্ঘদিন পদোন্নতির আশার কাজ করছেন তার মধ্যে হতাশা দেখা দেবে। সামনে খালি হওয়া পদগুলো উপযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে পূরণ করলে সরকারের কাজেও যেমন গতি থাকবে, কর্মকর্তাদের মধ্যেও কর্মচাঞ্চল্য থাকবে।

আগামী জুলাই মাসে মুখ্য সচিবের পদসহ চারটি পদ খালি হওয়ার কথা রয়েছে। আগস্টে খালি হবে দুই সচিবের পদ, সেপ্টেম্বরে তিনটি, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদসহ অক্টোবরে তিনটি, নভেম্বরে তিনটি এবং ডিসেম্বরে ১০ সচিবের পদ ফাঁকা হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছিল গত বছরের অক্টোবরে। পরে তাকে জাতীয় নির্বাচনের আগে আরও এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। আগামী ১৩ অক্টোবর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। ফলে এ পদে কেউ নতুন আসবেন নাকি তাকেই আরও এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনার যেন শেষ নেই। চুক্তির বিষয়টি একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। আগামী ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

এদিকে কোনো সচিবের পদ ফাঁকা হলে নতুন করে সচিব পদোন্নতি পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যেই এই ব্যাচ থেকে সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে আগের ব্যাচ থেকেও কেউ কেউ নিয়োগ পেতে পারেন। চলতি মাসের ৩০ জুন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন ২ জুলাই অবসরে যাবেন। ৫ জুলাই মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ। ওএসডিতে থাকা সিনিয়র সচিব খাজা মিয়া ৪ জুলাই অবসরে যাবেন। বিডার চেয়ারম্যান সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুনের চুক্তি শেষ হবে ৬ জুলাই। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন অবসরে যাবেন ২৭ আগস্ট, একদিন পরে ২৮ আগস্ট অবসরে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আবদুস সালামের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর। ২৮ সেপ্টেম্বর চাকরি শেষ হচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদের। পরের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর চুক্তি শেষ হচ্ছে ইরাকের রাষ্ট্রদূত (সচিব মর্যাদা) ফজলুল বারীর। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খায়রুল ইসলামের চুক্তি শেষ হবে ১ অক্টোবর। বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিুবর রহমান অবসরে যাবেন ৯ অক্টোবর। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের চুক্তি শেষ হবে ১৩ অক্টোবর। ধর্ম সচিব মু. আবদুল হামিদ জমাদ্দার ৪ নভেম্বর, ভূমি সচিব খলিলুর রমহান ২৪ নভেম্বর, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী ৩০ নভেম্বর অবসরে যাবেন। এ ছাড়া সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমেদ ৭ ডিসেম্বর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধূরী ৩০ ডিসেম্বর, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। রাষ্ট্রপতির সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খানের চুক্তি শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। একই দিনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনের চুক্তি শেষ হবে। এ ছাড়া ওই দিন অবসরে যাবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ, আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, বাণিজ্য সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর