বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

এডিসি কামরুল ও স্ত্রীর সম্পদ ক্রোকের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকা মূল্যের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালত এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

দুদকের চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার আদালত পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল ও তার স্ত্রীর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। অনুসন্ধানে দুদক এডিসি কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পায়। এ ছাড়া তার স্ত্রী সায়মা বেগমের ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। গত ১৩ মে প্রধান কার্যালয় বরাবর অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। দুদকসূত্র জানান, ২০২৩ সালের ৩১ মে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে কামরুল হাসানের সম্পদের অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৪ আগস্ট তাকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে দুদক কর্মকর্তা এমরান হোসেন চলতি বছরের ১৩ মে ?দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কামরুল হাসান ও তার স্ত্রীর মোট স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার। এর মধ্যে আছে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর হালিশহরে পৃথকভাবে ৪০ শতক জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদে ০.৩৩ শতক ও পৃথকভাবে ২ কড়া ৩ সমস্ত ৬ ভাগের ১ দন্ত ভিটি ভূমি, ঢাকার সাভারে ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি, সাভার সিটি সেন্টার অ্যান্ড টাওয়ার নামে একটি ১২ তলা ভবনের বেসমেন্টে ২২টি দোকানের সমান জায়গা যা ইনফিনিটি মেগামল নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, প্রথম থেকে চতুর্থ তলায় ছয়টি দোকান এবং এর ওপরে সাতটি ফ্ল্যাট। নগরীর খুলশী মৌজায় দি চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের আওতাধীন জমিতে নির্মিত ফয়জুন ভিলা নামে একটি ভবনে মোট ২৭০৬ বর্গফুট জায়গা, পশ্চিম নাছিরাবাদে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও পৃথকভাবে শূন্য ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ নাল জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদে ৭ শতাংশ ভিটির ওপর ঘর, ঢাকার সাভারের আনন্দপুরে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ নাল জমি, সাভার সিটি টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট এবং সিডিএ’র অনন্যা আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠার একটি প্লট। উভয়ের অর্জিত অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার। এর মধ্যে আছে সোনালী ব্যাংকে ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, সায়মা হাসানের নামে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের চারটি লাইটারেজ জাহাজ-এমভি প্যাসিফিক রাইডার, এমভি পানামা ফরেস্ট-১, এমভি রাইসা তারাননুম ও বার্জ আল বাইয়েৎ। আদালতে দাখিল করা আবেদনে দুদক কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন উল্লেখ করেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের পর থেকে অভিযোগসংশ্লিষ্টরা তাদের নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, বিক্রি বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন মর্মে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির বিষয়ে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তা বেহাত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ (সংশোধন ২০১৯)-এর বিধি ১৮ মোতাবেক বর্ণিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আবেদন করা হয়। জানা যায়, মোহাম্মদ কামরুল হাসানের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি উপপরিদর্শক (এসআই) পদে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী-বাঁশখালীসহ একাধিক থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তার সিএমপিতে পদায়ন হয়। তিনি সিএমপির প্রসিকিউশন শাখার সহকারী কমিশনার ও পরে অতিরিক্ত উপকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (অপরাধ) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার পদে আছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর