সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

নির্বাচনি আইন সংস্কারে উদ্যোগ

সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচনি আইন সংস্কারে উদ্যোগ

জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনি আইন সংস্কারে উদ্যোগ নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের আইনে ব্যাপক সংস্কারের পর ইসি এ উদ্যোগ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচনের আইন একই রকম করার পরিকল্পনা রয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটির। দেখা গেছে, প্রার্থী হওয়ার সুযোগ, জামানত ও অন্যান্য বিষয় সংসদ নির্বাচনে এক রকম; স্থানীয় নির্বাচনে অন্য রকম। সম্প্রতি ইসি উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সব শর্ত তুলে দিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে ডিজিটাল প্রচার, রঙিন পোস্টার ব্যবহারসহ নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণবিধিতে ব্যাপক সংশোধন করেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ১০-১৫ গুণ বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে সংসদ ও অন্যান্য নির্বাচনও উপজেলা নির্বাচনের আইন ও বিধির আলোকে করার প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। তবে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দেওয়ার বিধান তুলে দেওয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাব পরবর্তী নির্বাচন কমিশনের জন্য রেখে যাবে বর্তমান কমিশন। এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের আইন ও বিধিতে সংস্কার করা হয়েছে। জামানত বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য নির্বাচনেও জামানত বাড়ানো হবে। প্রথমে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরপর সংসদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের আইনে পরিবর্তন করা হবে। এদিকে আইন সংস্থারের প্রথম উদ্যোগ হিসেবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জামানত কয়েক গুণ বাড়ানোর চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে কোনো শর্ত না রাখার পরিকল্পনা করছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট সিটির ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান তুলে দেওয়া হচ্ছে। সিটির নাগরিকরা চাইলেই মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবেন। এসব বিধিবিধান সংশোধন নিয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সিটি নির্বাচনের আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী হতে দলীয় প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হয়। আর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কাজে জমা দিতে হয়। তবে নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার এ শর্ত তুলে দেওয়ার চিন্তা করছে। আগামী সপ্তাহের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের আগেই আইনে সংশোধন আনা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইন সংস্কার নিয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। এদিকে বর্তমানে সিটি আইন অনুযায়ী মেয়র প্রার্থীর জামানত হচ্ছে অনধিক ৫ লাখ ভোটারের নির্বাচনি এলাকার জন্য ২০ হাজার; ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ ভোটারের নির্বাচনি এলাকার জন্য ৩০ হাজার; ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ ভোটারের নির্বাচনি এলাকার জন্য ৫০ হাজার; ২০ লাখ ১ ও তদূর্ধ্ব ভোটারের নির্বাচনি এলাকার জন্য ১ লাখ টাকা। এ জামানত কয়েক গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনধিক ১৫ হাজার ভোটারের ওয়ার্ডের জন্য ১০ হাজার; কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার-ঊর্ধ্ব ভোটারের ওয়ার্ডের জন্য ৫০ হাজার টাকার জামানত দিতে হয়। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিটি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়।

এদিকে দেশব্যাপী উপজেলা নির্বাচন শেষ করেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির। চলতি বছরের ডিসেম্বরে দুই নির্বাচনের তফসিল দিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে ভোট করার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এ ছাড়া দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে কোনো জটিলতা আছে কি না তা জানতে চলতি মাসেই স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেবে ইসি। চিঠির জবাব পেলেই এ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবে। এবারের নির্বাচন ব্যালট পেপারে না ইভিএমে হবে-সে বিষয়ে তফসিলের সময় সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। এপ্রিলে হতে পারে এইচএসসি পরীক্ষা। তাই এসএসসি পরীক্ষার আগেই নির্বাচন করতে হবে ইসিকে। জানুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষ সপ্তাহে দুই সিটি নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে। পৌরসভায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে ১০০ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দিতে হয়। জামানত হচ্ছে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কাউন্সিলরের জামানত ৫ হাজার টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর