শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে উত্তাল ছিল সারা দেশ

সকালে ক্যাম্পাসছাড়া ছাত্রলীগ, দুপুরের পর থেকে হল ছাড়ে ছাত্ররা, সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছুটির দিনে উত্তাল ছিল সারা দেশ

সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন রক্তক্ষয়ী ঘটনাপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। আন্দোলনকারী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ চলছেই।

গত বুধবার সরকারি ছুটির দিনেও সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষের খবর জানা গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।   

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বুধবার থেকে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন এবং হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়ে গেছেন। 

বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়েন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। জানাজা শেষে তারা সমবেত হয়ে টিএসসির দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ দুই দিক থেকে আক্রমণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ব্যাপক সংষর্ঘ শুরু হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এর আগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ অনেকের কক্ষ ভাঙচুর করেন তারা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) হল ছাড়ার নির্দেশের প্রতিবাদে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে হল থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় কর্তৃপক্ষ।

একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সিন্ডিকেট সভায় হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর রেজিস্ট্রার ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়করা দাবি করেন, আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ ধরনের হামলা চালিয়েছে অনুপ্রবেশকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান যখন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত পড়ে শোনাচ্ছিলেন তখন শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে ধিক্কার  দেন।  এরপর কিছু শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রার ভবনের দিকে জুতা ও  ইট নিক্ষেপ করেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন ও হত্যার প্রতিবাদ জানাতে বুধবার দুপুরে টিএসসিতে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আক্তার হোসেন ও তার তিন সহযোগী। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা সরতে না চাইলে চার রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে আক্তার ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশের বাধায় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। বিকালে তাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে সবাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো হল ফাঁকা হয়ে যায়। এর আগে দুপুরের পর থেকে শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ হল ছাড়তে শুরু করে।

বুধবার রাত ৮টায় ঢাবি ক্যাম্পাস ও হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। 

শিক্ষার্থীরা বুধবার রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের বাধায় পিছু হটতে বাধ্য হন তারা। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় আন্দোলনকারীরা চানখাঁরপুল থেকে শহীদ মিনারের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলনকারীরা পিছু হটে আবার চানখাঁরপুলের দিকে ফিরে যায়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা ও শনিরআখড়ায় বুধবার রাতভর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি, ককটেল। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের দুই সদস্য ও আটজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একপর্যায়ে শনির আখড়ার কাজলায় হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। এ সংঘর্ষের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি মোটরসাইকেল ও সিএনজি পুড়িয়ে দেন আন্দোলনকরীরা। এর আগে যাত্রাবাড়ী থানায়ও হামলার ঘটনা ঘটে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বুধবার সকাল ১০টায় কোটা আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীরা শহীদ হবিবুর রহমান ছাত্রাবাসে গিয়ে কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করেন, যেখানে ছাত্রলীগ নেতারা থাকতেন। আন্দোলনকারীরা একপর্যায়ে উপাচার্যকে ঘেরাও করে রাখেন। আবাসিক হলগুলো ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন এবং ছাত্রবাস ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যকে প্রায় ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। খুলনায় আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করেন।

সর্বশেষ খবর