বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

নরসিংদী কারাগারের আরও ১৫৬ বন্দির আত্মসমর্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই নারী জঙ্গিকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেপ্তার দুই নারী জঙ্গি হলেন- ইসরাত জাহান মৌ ও খাদিজা পারভীন মেঘলা। গত বুধবার রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে গতকাল নরসিংদী আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম রিপনের মাধ্যমে আরও ১৫৬ জন বন্দি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। নরসিংদী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাকিবুল হকের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বন্দিরা। এই নিয়ে মোট ২৮৯ জন বন্দি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলেন। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জেল পালানো দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করে আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। এখনো সাত জঙ্গি আত্মগোপনে আছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলার ঘটনা ও জঙ্গি ছিনতাইসহ এই আন্দোলনে যারা নাশকতা চালিয়েছে ও উসকানি দিয়েছে আমরা এ রকম ২/১টি গ্রুপকে শনাক্ত করেছি। একজনকে আমরা শনাক্ত করেছি, যিনি এর আগে আমাদের হাতে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এই আন্দোলনে তিনি ব্যাপক সহিংস কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। ইতোমধ্যে তার নাম ও নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে। অচিরেই তাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারব। আমাদের ধারণা, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার নেপথ্যে উগ্রপন্থি বা জঙ্গি সংগঠনের কারও যোগসাজশ থাকতে পারে। এদিকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস বর্বরোচিত হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় দুটি মামলা ও সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ৬টিসহ জেলার বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে হামলার সময় কারাগারের দায়িত্বে থাকা জেলার মো. কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন। বিভিন্ন থানার পুলিশ বাদী হয়ে আরও ৬টি মামলা দায়ের করেন। চলমান সহিংসতার অভিযোগে নরসিংদীতে ১০৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নরসিংদী কারাগারে হামলা করে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যাওয়ার কিছু ভিডিও এসেছে গণমাধ্যমের হাতে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, জেলখানার অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে অস্ত্র হাতে উল্লাস করছে বিক্ষোভকারীরা। আবার সেই অস্ত্র দিয়েই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। একসঙ্গে এত অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্ষোভকারীদের হাতে চলে যাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল বিক্ষোভকারীরা। তাই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে টিকে থাকতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কারাগারের অস্ত্র লুটের পর বিক্ষোভকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা পুলিশকে মেরে ডিসি অফিস ও এসপি অফিসসহ আদালতপাড়ার দিকে আসতে চেয়েছিল। সরকারি সম্পদ ও মানুষের জানমাল রক্ষায় আমরা পুলিশ সদস্যরা জীবন বাজি রেখে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। এতে আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। কারাগারে হামলা, অস্ত্র লুট, পুলিশকে আহত ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে পৃথক ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই বিকালে মুহুর্মুহু ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে নরসিংদী জেলা কারাগারের দুই দিকের ফটক ভেঙে ভিতরে ঢোকেন হামলাকারীরা। এ সময় পেট্রলবোমা মারা হয়। এতে কারাগারের ভিতরে নানা জায়গায় আগুন ধরে যায়। হামলাকারীরা কারারক্ষীদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চাবি দিয়ে বন্দিদের অনেকগুলো কক্ষের তালা খুলে দেন। কিছু কক্ষের তালা ভেঙে ফেলা হয়। চারপাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা আসামি ছিনিয়ে নেন। এরপর একে একে ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান। এ সময় অস্ত্রাগার ও কারারক্ষীদের থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও ৮ হাজার ১৫০টি গুলি লুট করা হয় বলে জানা গেছে। পালিয়ে যাওয়া ২৮৯ জন বন্দি গতকাল পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছেন। কারাগারে হামলায় জড়িত সন্দেহে গতকাল পর্যন্ত ১০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ৩৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১১০০ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নরসিংদী কারাগারের জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ ও জেলার কামরুল ইসলামকে গত মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সর্বশেষ খবর